জাতীয়

অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি,জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার। দেশবরেণ্য রাজনীতিক। 

অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি,জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার। দেশবরেণ্য রাজনীতিক।

কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল গল্লাই গ্রাম। ১৯৪৭ সালের ১৭ নভেম্বর এক শুভলগ্নে এ গ্রামেরই এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মো: আলী আশরাফ। পিতা মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা ইসমাইল হোসেন মুন্সী ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও আধ্যাত্নিক জ্ঞান সম্পন্ন। মা মরহুমা শামসুন্নাহার বেগম একজন আদর্শ তীক্ষ্ম-বুদ্ধি সম্পন্ন পরহেজগার মহিলা। শিশুকালেই পিতৃহীন হন মো: আলী আশরাফ। একমাত্র শিশুপুত্র নিয়ে মমতাময়ী মায়ের সংসারজীবন। পিতার স্বল্পকালীন আশির্বাদ ও মায়ের স্নেহই পথচলার পাথেয়। দেড়/দুই কিলোমিটার মেঠোপথ পেরিয়ে মো: আলী আশরাফের স্কুলে পাঠগ্রহণ শুরু। স্কুলে কোন ঘর ছিলো না। বকুলতলার এক বৈঠকখানায় পাঠদান। একজন শিক্ষক প্রশান্ত পন্ডিত। খুব কড়া শিক্ষক। পড়া না পারলে বেদম পিটুনি। ৪/৫জন শিক্ষার্থী। একদিন অন্যান্য ছেলেদের পিটুনী দেখে নিজ গ্রামের এক সহপাঠী ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। পরে সঙ্গীকে হারিয়ে তিনি একাই স্কুলে যেতে থাকেন। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথ কন্টাকাকীর্ণ। খাল-বিল-নালা। বর্ষায় অবলম্বন নৌকা। শুকনো মৌসুমে রোদ-জল-কাদা পেরিয়ে পায়ে হেটে গমনা-গমন।

৫ম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যেতে হবে রামমোহন হাইস্কুলে। ১৫ কিলোমিটারের পথ। বর্ষা মৌসুম। ঝড়-বৃষ্টি-তুফান। নৌকা প্রয়োজন। মাঝি পাওয়া দু:স্কর। মাঝির সন্ধান মিললো বাড়ির পাশে। এক সন্ধ্যায় শিকের সাথে নৌকায় করে রওয়ানা করলেন বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে। শিক পাটখড়ির আগুনে রাতে নৌকায় রান্না করলেন। এভাবেই খাওয়া-দাওয়া। পৌঁছলেন পরদিন সকালে। পরীক্ষায় শেষে ওই দিন মধ্য রাতে ফেরেন বাড়িতে। পেলেন জীবনের প্রথম বৃত্তি। পিতৃহীন একমাত্র পুত্রধনের বৃত্তি জয়ের সুসংবাদে মায়ের মুখ চিকচিক করে উঠে। শিক্ষাগ্রহণে এ বৃত্তিই তাঁকে ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনা দেয়। আধ্যাত্মিক পিতার স্বল্প সময়ের আশির্বাদ আর মায়ের জীবনদর্শন এবং বিরূপ পরিবেশ মো: আলী আশরাফের ব্যক্তি-শিক্ষা-কর্মজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এভাবেই শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপ সমাপ্ত করেন তিনি।
৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেন দোল্লাই-নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ৩/৪ কিলোমিটারের পথ। ৮/৯ টি খাল পার হতে হয়। অবস্থান করেন বিদ্যালয়ের বর্ডিংয়ে। বাড়ি থেকে চাল নিয়ে সেখানে রান্না করে খাওয়া। মনোযোগের সাথে সম্পন্ন করেন উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ। ১৯৬২ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় চান্দিনা সদরের একটি স্কুলে। প্রায় অর্ধেক পরীক্ষা হওয়ার পর তুফানে পরীক্ষা কেন্দ্র ঘরের টিনের চাল উড়ে যায়। ১/২ মাস পর আবার বাকি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে ১ম ডিভিশন অর্জন করেন তিনি। এবার কলেজে যাবার পালা। ইচ্ছে ছিলো ঢাকায় গিয়ে ভালো কোন কলেজে পড়াশুনা করার। কিন্তু মায়ের প্রেম আর মমতা বলে কথা। যে ছেলে জগৎ জয় করবে, মা’ চেয়েছেন সে ছেলে যেনো চোখের আড়াল না হয়। বিশাল এ পৃথিবীতে মমতাময়ীর আঁচল তলই যেনো তাঁর সর্বোচ্চ নিরাপদ স্থান। মাতৃস্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ মো: আলী আশরাফ। স্রষ্টা যার পরিচর্যক, তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। প্রকৃতি তার আপন ক্রোড়ে রেখেই মানুষ করেন। অবশেষে মায়ের নির্দেশেই উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। নিউ হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করতে থাকেন। মায়ের কথা মনে পড়লে ঘনঘনই যেতেন বাড়িতে। কুমিল্লা থেকে গাড়িতে করে চান্দিনায় নেমে ২০/২৫ কিলোমিটার খাল-বিলের পথ পায়ে হেটে গিয়ে পেতেন মায়ের দর্শন। মায়ের দর্শন লাভে এ সীমাহীন কষ্ট কখনোই মনে জাগেনি।

ওই সময় পাকিস্তানের শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জেগে উঠে পূর্ববাংলার সকল শিক্ষক-ছাত্র। শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের প্রতিবাদে আন্দোলন। চলছিল, আইয়ুব-ফাতিমা জিন্নাহর নির্বাচন। ভোটার ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও সদস্যরা। ভিক্টোরিয়া কলেজ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত ওই প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দিতে থাকেন মেধাবী শিক্ষার্থী মো: আলী আশরাফ। ওই সময়কার তার বক্তব্য জনতার হৃদয়ে দাগকাটতে থাকে। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সেই বছর হোসেন শহীদ সরোয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আসেন কুমিল্লা টাউনহলে। একদিন রাতে ছাত্রনেতা জহিরুল কাইয়ুম তাকে বললেন, শেখ মুজিবুর রহমান কুমিল্লায় ছাত্রদের সাথে দেখা করতে চান। সিনিয়র ছাত্রদের সাথে গেলেন তিনি। গিয়ে দেখেন, হোসেন শহীদ সরোয়ার্দী ঘুমিয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু সাক্ষাৎ দিলেন। এ সময় ছাত্রনেতা হাবিবুল্লাহ চৌধুরী, আফজল খান, যুক্তফ্রন্টের মিনিস্টার আবদুর রহমান খান সাহেব উপস্থিত ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান বললেন, ‘ছাত্রলীগ করতে হবে। দেশের এ দুর্গতী রুখে দাড়াতে হবে। তোমরা ঢাকায় আসলে আমার সাথে দেখা করবে।’ মো: আলী আশরাফ জীবনে প্রথম কাছ থেকে এভাবেই দেখা পেলেন শেখ মুজিবুর রহমানের।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ছেন অনার্সে। এ সময় ঢাকায় ছাত্রলীগের কনফারেন্স। ঢাকায় গেলেন মো: আলী আশরাফ। দেখলেন, বঙ্গবন্ধু একটি গাড়িতে চরে সেখানে আসছেন। গাড়ি থামিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে দেখে প্রথম দর্শনেই বললেন, ‘এই ছেলে, তোমার বাড়ি কুমিল্লা না? এ কথা শুনে মো: আলী আশরাফসহ কুমিল্লা থেকে যারা গেছেন, তাঁরা সবাই থমকে গেলেন। কতোদিন আগের এক মুহুর্তের দেখা, এর পরও এভাবে স্মরণে? সদা হাস্যজ্জ্বল চিন্তাবিদ শেখ মুজিবুর রহমান এক নজর দেখেই আঁচ করতে পেরেছিলেন, এই ছেলে থেমে যাবার নয়। এগিয়ে যাবে, দেশকে এগিয়ে নিবে অনেক দূর। স্রষ্টা যার প্রতি সহায় হন, যাকে করবেন কালজয়ী প্রকৃতি তাঁর অনুকুলেই রাখেন। যার হাতে দেবেন আলোর মিছিল, তাঁকে পরিপূর্ণ মানবীয় গুনাবলী ও সৎগুনের অধিকারী করেই গড়ে তুলেন।

বিচণ রাজনীতিক শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্র-দীক্ষালাভে মো: আলী আশরাফের পথ প্রশস্ত হলো অনেক দূর। যোগ্য গুরুর যোগ্য শিষ্য। ১৯৬২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশের সংগঠন ছাত্রলীগে যোগদান করেন। পরে তৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ অলংকৃত করেন মো: আলী আশরাফ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপে জনমত গঠনে বক্তব্য দিতে লাগলেন কুমিল্লা ও এর আশপাশের ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চৌমুহনীতে। ব্যাপক জনমত অর্জন।
১৯৬৫ সাল।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকনোমিকস বিভাগে পড়ছেন। থাকেন এসএম হলে। ওই সময়কার অধিকাংশ ছাত্রই ছিল ছাত্র ইউনিয়নের সম্পৃক্ত। তবে, ইকনোমিকস বিভাগের ছাত্রদের মধ্যে রাজনীতি করার প্রবনতা ছিল খুবই কম। কারন, যোগ্যতা না থাকলে ইকনোমিকস বিভাগে কোন ছাত্র ভয়েই ভর্তি হতো না। সরকারি দল করতো এনএসএফ। পড়ালেখাকালীন নিয়মিত বিভিন্ন শিক্ষামুলক প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নেন। এতে করে দুই পাকিস্তানের বৈষম্যের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উঠে আসে। ধীরে ধীরে দানাবাঁধে ক্ষোভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন মো: আলী আশরাফ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগে এম.এ পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে পড়ালেখা সম্পন্ন করে ত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পূঁথিগত বিদ্যার্জন সমাপ্ত করলেও জ্ঞানার্জনে উন্মুখ মেধাবী শিক্ষার্থী মো: আলী আশরাফ। সকল অজানার প্রতি জানার আগ্রহ অনবরতই তাকে তাড়া করেছে।

জীবনের প্রথম কর্মজীবনে যোগদান করেন ব্যুরো অব ইকনমিক রিসার্স এর গবেষনা কর্মকর্তা হিসাবে। এটি ছিলো জাতিসংঘের একটি প্রজেক্ট। এ চাকুরির মাধ্যমেই গবেষণা কাজে তিনি সর্বপ্রথম লাহোর, ইষামাবাদ ও করাচিসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় গমনাগমন করেন। সেখানকার শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ইন্টাভিউ করতে থাকেন। মেধাবীরা যে সর্ব ক্ষেত্রেই মেধাবী। তা’ সত্যে পরিনত করলেন তিনি। পূর্ব ও পশ্চিমের বৈষম্যর প্রকৃত চিত্র তাঁর নজর এড়ায়নি। দেশ এক অথচ সকল ক্ষেত্রেই ব্যাপক বৈষম্য। এ সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ খন্ডকালীন শিক্ষক পদে চাকুরিতে যোগদান করেন।

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে বিদ্যার্জন ও পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে চাকুরি গ্রহণের পরও ভুলে যাননি মা-মাটি ও ঘরের কথা। অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ ভুলে যাননি মায়ের ভেঁজা-কাদা মাটির সোদাগঁন্ধ। অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছেন রূঢ়, বাস্তব বর্তমানের উপর। যুদ্ধ, বিনাশ, পরাধীনতা এসব যুগ-যন্ত্রণা এবং অভিজাত গোষ্ঠীর শঠতা, নীতিহীনতা, নীচতা, দুর্নীতি অধ্যাপক মো: আলী আশরাফকে এতোটা ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল যে, তিনি অতীতের হিরন্ময় স্মৃতি ধরে রেখে সমাজের অর্ধচেতন, অচেতন-অবচেতন মানুষগুলোকে সচেতন করে ভবিষ্যতের সোনালী স্বপ্নের সন্ধানে একমূহুর্তের জন্যও বিলম্ব করেননি। তাই তাঁর মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি ১৯৭০ সালে সর্বপ্রথম চান্দিনায় প্রতিষ্ঠা করলেন দোল্লাই-নবাবপুর ডিগ্রী কলেজ। বাড়িতে গিয়ে টাকা-পয়সা যোগার করে খরচ চালাতে লাগলেন কলেজের। নতুন করে আলোর মুখ দেখলো চান্দিনার শিক্ষার্থী ও শিক্ষাঙ্গন। নতুন এ যুগে প্রবেশ করলো চান্দিনা। অতিদ্রুতই আলোকিত হতে থাকলো ঐতিহাসিক শ্রী পন্ডিত শীল ভদ্রের জন্মস্থান চান্দিনা উপজেলায়।

পরে যোগদান করলেন মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃ প্রচার বিভাগের পরিচালক হিসাবে। দেশের হয়ে বিশ্ব জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে থাকেন তিনি। নতুন এ চাকুরির খবর পেয়ে মায়ের মন চমকিত হয়ে উঠে। মায়ের ধারণা ছেলেকে আর আঁচলে বেঁধে রাখা যাবে না। দেশ-বিদেশ ঘুরবে। চলার পথে হয়তো কোন বিদেশীনীকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করবে। কোন বিদেশীনীকে বিয়ে করে প্রবাসে পাড়ি জমালে মায়ের মন আর স্থির থাকবে না। তাই, মা ছেলেকে ডেকে আনলেন বাড়িতে। আদরে বুকে জড়িয়ে বললেন- ‘বাবা আলী আশরাফ, এ চাকুরি ছেড়ে দাও। তোমার এখন বিয়ে করার সময় হয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত, তোমার খালাতো বোন জাহানারা বেগমকে তুমি বিয়ে কর। সুখি হবে, বাবা।’ মায়ের স্নেহ-মমতায় লালিত হয়েছেন, মায়ের আনুগত্য প্রকাশ করেছেন সর্বক্ষণ । যে আলী আশরাফ মায়ের নির্দেশ ব্যতিরেকে এক পা’ও বাড়াননি কখনো সেই সুযোগ্য পুত্র কি মায়ের অবাধ্য হতে পারে? তাই এক বাক্যে মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন। সম্মতি প্রদান করলেন। মা’ পরম সুখি ও খুশি। স্বল্প সময়ে বিয়ের আয়োজন হলো। মায়ের আশির্বাদ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংসারজীবনে প্রবেশ করলেন অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ। নব দম্পতির নব যুগের সূচনা।

১৯৭১ সাল। রণ প্রস্তুতি। বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশ ও নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। প্রথমে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুরের পালাটানা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ট্রেনিংক্যাম্প স্থাপন করেন। একই সময়ের মধ্যে দেশ-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপে জনমত গড়তে লেগে যান তিনি। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এই প্রশিণ ক্যাম্পে কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষ উপস্থিত হন। বিপুল পরিমান এই মুক্তিযোদ্ধার অন্ন-বস্ত্রের সংস্থানও করতে হয়েছে তাঁকে। অর্জিত নিজ জ্ঞান-বিজ্ঞান অনুযায়ি একই সময়ে তিনি প্রশিণ প্রদান করতে থাকেন হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে। দেশজুড়ে যুদ্ধের দামামা। অপশক্তির বিরুদ্ধে শক্তির প্রাণপণ লড়াই। হয়তো স্বাধীন হবে, নয়তো মরবে। এমন সময় খবর পেলেন, স্ত্রী জাহানারা বেগম অন্তসত্বা। এই সময়ে যে কোন স্ত্রীই কামনা করে স্বামীর পাশে থাকা। আর এ কামনা এমনিতেই ন্যায় সংগত এবং অতিব জরুরী। অন্য দিকে, যুদ্ধের মাঠ থেকেও পিছু হটা যাবে না। দেশ বাঁচলে দেশের মানুষ বাঁচবে। নয়তোবা কারোরই বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নেই। শত্রুপ মরণ কামড় দিয়েছে। হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। লাশের পর লাশ পড়ছে শহর-বন্দর-নদী-নালা-মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তরে। আকাশে-পাতালে যুদ্ধ। তাই সম্মুখ যুদ্ধকেই শ্রেয় মনে করলেন অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ।

যুদ্ধ চলাকালিন তিনি ঢাকায় যোগাযোগ করেন বঙ্গবন্ধুর সাথে। বঙ্গবন্ধু তাঁকে দায়িত্ব দেন ঢাকায়। যুদ্ধ চলাকালীন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত, বক্তৃতা-বিবৃতি, দেশের ও আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় বিভিন্ন ভাষায় প্রেস রিলিজ এবং আর্ন্তজাতিক অঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের স্বপে সমর্থন ও সহযোগিতা লাভে রাত-দিন কাজ করতে থাকেন তিনি। দেশের বিরাজমান প্রোপ নিয়ে ২৬ মার্চ কালো রাতে তিনি বৈঠক করেন বহিরাগত অনেক হাই কমিশনারদের সাথে।

সফল হলেন, মুক্ত স্বদেশ। স্বাধীনতা লাভের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নির্দেশ দিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকুরী ছেড়ে দেয়ার। বঙ্গবন্ধু বললেন, নিজ এলাকায় গিয়ে জনগণের খোঁজ-খবর নিতে এবং সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে। হাজির হলেন চান্দিনায়। কিন্তু সংসদ নির্বাচনে নিজে অংশ না নেয়ার মত প্রকাশ করলে সঙ্গীয় মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন তাঁর উপর ক্ষেপে যান। সিদ্ধান্ত নিলেন, চাকুরিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করবেন। এক পর্যায়ে তাঁর বাড়ি-ঘর গুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন সুভাকাঙ্খিরা। কিন্তু খ্যাতি তাঁকে নিরিবিলি জীবন-যাপন করতে দিল না। যুদ্ধর বিভীষিকার চিন্তায় ক্ষুব্ধ। সদ্য মুক্ত দেশ। যুদ্ধে বিধ্বস্ত। অভাব-অনটন দ্বারে-দ্বারে। মানবতা রার মন্ত্রে যিনি উদ্ভূদ্ধ এমন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ঘরে বসে থাকতে পারেন না, পারেন না সরকারি চাকুরিতে থেকে ছাঁয়াহীন হয়ে যেতে। মা-দেশ-মাটি-মানুষকে ভালোবেসে যিনি জীবন বাজী রেখে অনবদ্ধ ভূমিকা রেখেছেন, তিনি তার ওই মা-দেশ-মাটি-মানুষকে ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারেন না। তাই তিনি বঙ্গবন্ধু ও সহযোগি সুহ্রদদের কথায় জনগণের ভোটে প্রথম কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতি নেন। ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চান্দিনা উপজেলা (বর্তমানে চান্দিনা ও দেবিদ্ধার) থেকে অংশ নেন। বিজয় লাভ করেন অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ। বঙ্গবন্ধুর মুখ উজ্বল করে সগৌরবে হাজির হন জাতীয় সংসদে। কাজ শুরু করেন নিজ এলাকার অধিবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে।

অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি মনে করেন, সুশিক্ষাই পারে ঘুনে ধরা এ সমাজকে বদলে দিতে। ছেলে-মেয়ে সবাইকে শিতি করে তুলতে হবে। যে যার পছন্দ মতো পেশা বেছে নেবে। তখন শিক্ষানুরাগী মো: আলী আশরাফ দোল্লাই-নবাবপুর ডিগ্রী কলেজ ছাড়াও, একে একে প্রতিষ্ঠা করতে লাগলেন- চান্দিনা মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মাধাইয়া কলাগাঁও কলেজ, দোল্লাই নবাবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কেরনখাল উচ্চ বিদ্যালয়, কলাগাঁও অধ্যাপক আলী আশরাফ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসমাইল ফাউন্ডেশন, গল্লাই ইসমাইল দাখিল মাদরাসা, দোতলা দাখিল মাদরাসা, চান্দিনা আল-আমিন দাখিল মাদরাসা, গল্লাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দিরসহ একাধিক ধর্মীয় ও শিক্ষামুলক প্রতিষ্ঠান। তাঁর নির্বাচনী এলাকা চান্দিনা উপজেলায় শতভাগ ছেলেমেয়েকে স্কুলে ভর্তি, অধ্যায়নকালীন ঝরে পড়া রোধ এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে অকান্ত পরিশ্রম এবং দারিদ্র নিরসন, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ।

দীর্ঘ বৈচিত্রময় জীবনে অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী অঙ্গনে খুবই সমাদৃত ব্যক্তিত্ব। বিশ্ব ব্যাংক, আইপিও এবং ওআইসি পার্লামেন্টারী ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটিতে সংসদ সদস্য হিসাবে তিনি বাংলাদেশের দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দতার সাথে। এতে করে বিশ্ব দরবারে অনেক প্রসংশনীয় হয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য্যকরী কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর পরিকল্পনার আলোকেই ২০০৮ সালের নির্বাচনী এশতেহারে আওয়ামী লীগ রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করে। যা’ সারাবিশ্বে ব্যাপক সমাদৃত হয় এবং দেশের মানুষের জীবনমান ও সার্বিক উন্নয়নের মাইলফলক।

দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ পর্যন্ত অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি প্রথম জাতীয় সংসদের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য। সপ্তম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার, লাইবেরী কমিটির এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সভাপতি। নবম জাতীয় সংসদের সরকারী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কার্যপ্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, পিটিশন কমিটি, সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য। দশম জাতীয় সংসদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সংসদ সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ১ম সংসদে সদস্য হিসেবে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর, ৭ম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৪ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৩ জুলাই, ৯ম সংসদে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং বর্তমান ১০ম সংসদে সদস্য হিসেবে ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছেন।

এছাড়াও, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, ফ্রান্স-বাংলাদেশ ওয়েল ফেয়ার সমিতির সভাপতি, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটির সাবেক সদস্য, ওআইসি পার্লামেন্টোরী ইউনিয়নের সাবেক নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী ইউনিয়নের আজীবন সদস্য, ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়নের (আইপিইউ) সাব-কমিটির সাবেক সদস্য, এএপিপি সম্মেলন কম্বোডিয়ার সভাপতি, বিশ্বব্যাংকের ষ্টিয়ারিং কমিটি সদস্য, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, ঢাকা ওয়াসা’র ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক সদস্য।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমন করেছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি সরকারী ও ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, কিউবা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, কলম্ভিয়া, আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা, ফ্রান্স, জার্মানী, হল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ইতালী, ভারত, পাকিস্তান, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিআরব, জর্ডান, মরক্কো, ইরান, ইরাক, মিশর, গ্রীস, সাইপ্রাস, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, দণি আফ্রিকা, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, ফিলিপিনস এবং অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন। পৃথিবীর উন্নত ও অনুন্নত এসব দেশ ভ্রমনে অর্জন করেছেন অনেক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। এসব দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি নিবিরভাবেই অবলোকন করেছেন তিনি। অর্জিত অভিজ্ঞতা নিজ দেশে কাজে লাগাতে সদা চিন্তিত তিনি।

অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি গবেষনা করছেন দেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সমস্যার উপর। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সময়ে সময়ে শিকতা ও দেশে-বিদেশে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিষয়ে শতাধিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সংসদীয় জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছেন একাধিক বই। প্রথমবারের মত নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদীয় আচরন, নৈতিকতা ও সংসদীয় বিষয়ে একজন সু-শিক্ষক হিসাবে তার সাথে তিনি প্রশিক্ষন প্রদান করেন। এতে করে নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদীয় রীতিনীতি সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন।
রাজনীতির পাশাপাশি অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ব্যবসা ও গবেষণা কাজকে। ইংরেজী ও আরবী ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপির জীবনকালেই দীর্ঘ গবেষণালব্ধ ফলাফলে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর রচিত দুনিয়াব্যাপী সারাজাগানো ৩টি প্রকাশনা। নিরস্ত্রীকরণ, সংসদীয় নৈতিকতা, প্রথম জাতীয় সংসদ ও অর্থনৈতিক দর্শনের ইতিবৃত্ত, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, বাংলাদেশে সংসদীয় কমিটি ব্যবস্থা, গ্রামীণ অর্থনীতি ও গ্রাম সমাজের শ্রেণী সম্পর্ক নিয়ে তাঁর রচিত ‘ইথিক্যাল স্টান্ডার্ড্স অব পার্লামেন্টারিয়ান্স’ ‘ডিজারমামেন্ট এন্ড হিউম্যান সোসাইটি’ এবং ‘এমপ্লোয়মেন্ট ইন গ্লোবালাইজড ওয়ার্ড, রুরাল ইকোনোমিক্স অব বাংলাদেশ’। এর মধ্যে ‘ইথিক্যাল স্টান্ডার্ড্স অব পার্লামেন্টারিয়ান্স’ পুস্তকটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পার্লামেন্ট এবং ইউএনডিপি।

বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে নিজ অভিজ্ঞতার ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি ১৯৮২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর এফবিবিসিআই নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিজিএমইএ ২ বার নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কোল্ড ষ্টোরেজ এসোসিয়েশনের সদস্য, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের দীর্ঘ ১২ বছর পরিচালক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, ঢাকা কাব লিঃ এর আজীবন সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য।

অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি দ্বিতীয় সংসদ, তৃতীয় সংসদ, পঞ্চম সংসদ, সপ্তম সংসদ, নব সংসদ ও দশম সংসদ এই ৮টি সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে অংশ গ্রহণ করেন। সামরিক সরকারের অধীনে পক্ষপাতিত্ব মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারনে তাঁর বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা তাকে রাজনীতিতে আসক্ত করে রেখেছে। দলমত নির্বিশেষে তাঁর নির্বাচনী এলাকার সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় মুগ্ধ। মতার লোভ বা কোন মোহ কোন দিনই তাকে আকৃষ্ট করেনি তাইতো তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

দীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলার জন্য জাতিয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে অনেক মূল্যবান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হল: অস্ট্রেলিয়ার ডাইকেন ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ’র মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি কর্তৃক এবং এফবিসিসিআই এর নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ভূমিকা রাখার জন্য ও ইউএনডিপিতে বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারলাভ। তাঁর বর্ণাঢ্য সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাস এ দেশে একটি বিশাল দৃষ্টান্ত।

অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি’র প্রথম মেয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক। কমনওয়েলথ ফেলো। বর্তমানে কানাডার স্বামী ডাঃ জাকারিয়া ও দুই সন্তানসহ বসবাস করছেন। দ্বিতীয় মেয়ে সুলতানা পারভীন খুবই মেধাবী, অনার্স ও মাষ্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পি.এইচ.ডি করেছেন। তার স্বামী ডাঃ মাহবুবুর রহমান উপ-কর কমিশনার। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি করেছেন। তৃতীয় মেয়ে স্বামীর সাথে সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থান করছেন। ছোট মেয়ে ডাঃ নুসরাত পারভীন অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে স্বামী ডাঃ আশরাফুল মাসুমসহ চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত। একমাত্র ছেলে মোঃ মুনতাকিম আশরাফ নিজের পারিবারিক ব্যবসা, হিমাগার পরিচালনা করেন। পুত্রবধু ডাঃ শাহিন সুলতানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা নিচ্ছেন। সূচিশুভ্র, রুচিশীল, পূত ও পবিত্র এবং ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য নিয়ে যার ব্যক্তিগত জীবন তিনি হচ্ছেন সততার উজ্বল দৃষ্টান্ত ও ন্যয়ের প্রতীক অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সর্বসময়ই সিক্ত অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি।

ক্ষমতার লোভ বা কোন মোহ কোন দিন তাঁকে আকৃষ্ট করেনি করতে পারেনি। দীর্ঘ সময় বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পরে কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে ২০০২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ কয়েক যুগে তিনি কুমিল্লায় দেশের অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে দাড় করিয়েছেন।

জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনাকাঙ্খিত হত্যাকান্ডের দিন সকালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়েছিলেন অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি। এর একদিন পর একটি বিষয় নিয়ে আবার যেতে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ঘাতকচক্র কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর প্রাণ হরণে ওই দেখাই জীবনের শেষ স্মৃতিই হয়ে আজো তাঁকে শিহরিত করছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মনে-প্রাণে লালন করে আওয়ামী লীগের তৎপরবর্তী দু:সময়ে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে দাড় করাতে নিরলস ভূমিকা রাখেন মো: আলী আশরাফ। ছাড়েননি হাল, ছাড়েরনি আশা। বিশ্বাস ছিলো- বাংলাদেশে দল একটিই, আর তা’ হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যে দলটির দেশের জন্য রয়েছে অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষা। গণমানুষের মনের ভাষা আর মর্মবেদনা বুজতে যে দলটির আর কোন অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজন নেই।
আইন দরিদ্রদের আটকানোর জন্য; তাঁদের ভাগ্যকে আরো সংকুচিত করার জন্য। ধনীরা বরাবরই থাকে আইনের উর্ধ্বে। এমনটি মানতে নারাজ তিনি। অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি বলেন, ‘বিএনপি জোট সরকারের সময় শুধুমাত্র চান্দিনা বাজারকে কেন্দ্র করেই কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজীর ঘটনা ঘটেছে। কোন প্রকার অপরাধ প্রবণতা এখন আর নেই। শতভাগ মুক্ত মাদক-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজী। কোর অপরাধে সম্পৃক্ত থাকলে এর থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগ হলেও কারো রেহাই নেই। এটা নিজ দলীয় নেতা-কর্মীরাও জানেন। দুর্নীতি একটি সমাজের জন্য কতোটুকু তিকর তা’ আমি বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি। তাই দুর্নীতিকে সমাজের সকল ত্রে থেকেই বিদায় দিতে হবে।’

অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি বলেন, জনকল্যান ও দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে রাজনৈতিক কোন প্রতিহিংসা মানতে নারাজ তিনি। রাজনৈতি প্রতিফলিত হবে শুধু জয়-পরাজয়ের দিন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন। তাঁর ব্যক্তিগত এ মূলমন্ত্রের কারনেই এক সময়কার অবহেলিত চান্দিনা উপজেলা আজ দেশের অন্যতম উন্নত এলাকায় পরিনত হয়েছে। যে চান্দিনায় জনসংখ্যার তুলনায় ভূমির পরিমান কম, সেই চান্দিনায় এ বছর ১৭ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যপণ্য উদ্বৃত্ত হয়েছে। চান্দিনার তরিতরকারি রপ্তানী হয় আজ ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে। তিনি বলে, চান্দিনা উপজেলার এমন একটি খালও নেই যেখানে সেতু হয়নি। পাকাকরণ ছাড়া কোন স্কুল, মসজিদ, মন্দির নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে প্রভূত উন্নতীর ফলে এক কালের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আজ পরিপূর্ণ আধুনিকতা বিরাজমান। ঘরে ঘরেই আজ চাকুরীজীবি আর প্রবাসী। তিনি আরো বলেন, চান্দিনা উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার যুদ্ধেও তিনি শতভাগ সফল হয়েছেন। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন ‘কুমিল্লা জেলার ১৬ উপজেলার মধ্যে চান্দিনা উপজেলা সকল ক্ষেত্র উন্নয়নের শীর্ষে। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি কোন নির্বাচনে অংশ নিলে, আর সেই নির্বাচনটি যদি হয় শতভাগ নিরপেক্ষ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপের উর্ধ্বে তাহলে তাঁর কোন প্রতিদন্দ্বিই জামানত ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না। এর কারন হিসেবে তিনি বলেন, ‘সারাটা জীবন মানুষকে ভালোবেসেছি। মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে শ্রম দিয়েছি। পরের দু:খ-কষ্টকে নিজে অনুভব করেছি। তাই গণমানুষ আমাকে ভালোবাসে এর প্রমান আমি পেয়েছি।’

বর্তমান রাজনৈতিক প্রোপট প্রসঙ্গে অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এমপি বলেন, বিএনপি জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় একটি ভূলই করেছেন। আর তা’ হলো গত নির্বাচনের আগে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সারা না দেয়া। ওই সময় জনস্বার্থে বিএনপিকে মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিতেও সম্মত হয়েছিলেন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এখন বিএনপি জোটের সামনে চলার আর কোন রকম পথ ও সুযোগই খোলা নেই। কারণ, গণতন্ত্রে তত্ত্বাবধায়ক বলতে কোন শব্দ নেই। শৃঙ্খলাবদ্ধ থেকে দল গুছিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়াই এখন বিএনপি জোটের জন্য উত্তম পন্থা।

সূত্র ঃ দৈনিক পূর্বাশা

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker