নারী ও শিশু

চান্দিনায় ধর্ষণের বিচার না পেয়ে কিশোরীর আত্মহত্যার চেষ্টা; থানায় মামলা দায়ের

 

চান্দিনায় ধর্ষণের বিচার না পেয়ে কিশোরীর আত্মহত্যার চেষ্টা; থানায় মামলা দায়ের

 

 

কুমিল্লার চান্দিনায় ধর্ষণের পর সমাজপতিদের কাছে সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আঁখি আক্তার (১৪) নামে এক কিশোরী। বর্তমানে সে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় সোমবার (৮ জুলাই) রাতে কিশোরীর মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে চান্দিনা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কেরনখাল ইউনিয়নের রামেশ্বর গ্রামে। ধর্ষক রাকিব হোসেন (২১) ওই গ্রামের ইউনুছ মিয়ার ছেলে। সে পেশায় ট্রাক্টর চালক।  এদিকে ওই ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার পর সোমবার রাতেই আসামীকে গ্রেফতার করতে একাধিক স্থানে অভিযান চালায় চান্দিনা থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চান্দিনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-৮। ভিকটিমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুলাই (শুক্রবার) ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করার পর শনিবার বিকেলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর নেতৃত্বে একটি শালিশ দরবার বসে।  শালিশে ধর্ষক উপস্থিত না থাকায় এবং সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে শনিবার (৬ জুন) রাতে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই কিশোরী। পরে তাকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

কিশোরীর মা ফাতেমা বেগম জানান, নিজের কোন ভূমি না থাকায় সরকারি খাস ভূমিতে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন। অন্যের বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালান। অন্যান্যদের মত শুক্রবারও তিনি কাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। বিকেলে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন তার মেয়ে প্রায় অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে।

পাশ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা ট্রাক্টর চালক রাকিব হোসেন তার কিশোরী মেয়েকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি বিষয়টি ধর্ষক রাকিব এর পরিবার, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানাই।  ফাতেমা বেগম আরও জানান, শুক্রবার রাতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেন, রাতে কোন কিছু করা সম্ভব না। যা করার সকালে করবো। পরদিন শনিবার সকালে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিকেলে শালিশের সময় দেন।  শনিবার বিকেলে শালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও ওই শালিশে ধর্ষক রাকিবকে উপস্থিত রাখেনি তার পরিবার। পরে শালিশে সিদ্ধান্ত হয়, যখন ছেলে (ধর্ষক) বাড়িতে আসবে তখন বিচার করা হবে। শালিশের এমন সিদ্ধান্ত শুনে রাতে আমার মেয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।  কিশোরী জানায়, শালিশের পর আমরা জানতে পাই ১০ বছরেও ওই ছেলে বাড়িতে আসবে না। তাহলে কি আমি আর বিচার পাবো না? আমি এ মুখ সমাজে দেখাবো কিভাবে? এসব ভেবেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেই।  এ ব্যাপারে কেরনখাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ জানান, শুক্রবার রাতে কেউ আমার কাছে আসেনি। শনিবার সকালে বিষয়টি আমি শুনে বিকেলে শালিশ দরবারের সময় দেই। শনিবার বিকেলে শালিশে বসে ধর্ষনের কোন তথ্য পাইনি। আর ছেলেও দরবারে উপস্থিত না থাকায় দরবার শেষ করতে পারিনি। ছেলের নানা কয়েক দিনের মধ্যেই বিষযটি সমাধান করবে বলে আমাদের আশ্বাস দেন।

এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো আবুল ফয়সল জানান, বিষয়টি আমাদের আগে জানা ছিল না। সোমবার সন্ধ্যায় ভিকটিমের মা এসে আমাকে জানালে তাৎক্ষণিক ভাবে আমরা অভিযোগ গ্রহণ করে আসামীকে গ্রেফতারে অভিযান চালাই। আসামী গাঢাকা দিয়েছে। আশাকরি শীঘ্রই আমরা তাকে গ্রেফতার করতে পারবো।

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker