অপরাধ
সোনাগাজীতে করোনায় আক্রান্ত সাহাব উদ্দিনের সাথে পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুর আচরণ!

সোনাগাজীতে করোনায় আক্রান্ত সাহাব উদ্দিনের সাথে পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুর আচরণ!
গাজী মোহাম্মদ হানিফ, ফেনী:-
সোনাগাজীতে করোনায় আক্রান্ত সাহাব উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সাথে পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুর আচরণ! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়!
ঘটনার বিবরণে জানা যায়- চট্টগ্রামের একটি পেট্টল পাম্পের কর্মী সাহাব উদ্দিন (৫৫)। শরীরে জ্বর-ব্যাথা নিয়ে বাড়ি ফিরেন গত বুধবার। শনিবার তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, জ্বরও বেড়ে যায়। অসুস্থ শরীর নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসা ছিল সাহাব উদ্দিনের ‘ক্ষমার অযোগ্য’ অপরাধ! এর শাস্তিস্বরূপ স্ত্রী-সন্তানেরা তাকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে দিয়ে দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দেয়।
ভেতরে আটকে পড়া সাহাব উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে দরজা খোলার অনেক আকুতি জানান। প্রচণ্ড ক্ষুধায় খাবার চান। তৃষ্ণা মেটাতে পানি চান। কিন্তু তার ভুলটা এত বেশি যে, কোনো আবেদনই মঞ্জুর হয়নি।
রবিবার রাতের কোনো এক সময়ে ছটফট করতে করতে প্রাণ হারান সাহাব উদ্দিন। সারাজীবন যাদের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, সেই মানুষগুলোকে জীবন সায়াহ্নে পাশে তো পেলেনই না, এক চামচ পানিও না!
অথচ তার করোনাভাইরাস কি-না সেটি তখনও নিশ্চিত না। সেদিন সকালেই তিনি নমুনা দিয়ে এসেছিলেন। স্ত্রী-সন্তানেরা এই নিষ্ঠুরতা না করলেও পারতেন।
সাহাব উদ্দিনের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলাধীন মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামে। স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়ে ও তিন জামাতা তার। দুই ছেলে কাজের সূত্রে গ্রামের বাইরে থাকেন। মৃত্যুর সময় অন্যরা বাড়িতেই ছিলেন।
মতিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু জানান- হাসপাতাল থেকে আসার পর পরিবারের কেউ সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেননি। দুপুরে তাকে খাবারও দেননি। বিকেলে শ্বাসকষ্ট ও কাশি বেড়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করে খাবার চাইলেও কেউ দেয়নি। পানিও পাননি।
তাকে শয়নকক্ষে তালা লাগিয়ে রাখেন পরিবারের সদস্যরা। ছোট ছেলে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে বোনেরা বাধা দেন। এভাবে চিৎকার করতে করতে রাত ১০টার দিকে সাহাব উদ্দিনের মৃত্যু হয়। রাতে সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন তিনি মারা গেছেন। এরপর সবাই যার যার ঘরের দরজা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকে যান। পরে ছোট ছেলে ‘বাবা মারা গেছে’ বলে চিৎকার শুরু করেন।
সরেজমিনে দেখা পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে ইউপি সদস্য এসএম ফেরদৌস রাসেল বলেন- বাড়ির একটি কক্ষে সাহাব উদ্দিনকে রেখে বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগানো ছিল। ছিটকিনি খুলে আমরা ভেতরে বিভৎস দৃশ্য দেখতে পাই। সম্ভবত সাহাব উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট উঠেছিল এবং তিনি তা সহ্য করতে না পেরে মাটিতে গড়াগড়ি করেছিলেন। তার পরনের কাপড় খোলা অবস্থায় পাশে পড়েছিল।’ পরে তারা লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।
মুফতি আহছান উল্যাহর নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন সোনাগাজী শাখার লাশ দাফন টিম তার দাফন কার্য সম্পাদন করেন।