তথ্য প্রযুক্তি
#রাত তখন এগারোটা।

#রাত তখন এগারোটা।
ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছেন ডাঃ নিজাম। পিপিই খুলে বিছানা গা এলিয়ে দেবার জন্য শরীরটা ছেড়ে দিচ্ছে।
ঠিক সেই সময়ে খবরটা এলো…নীচে একজন রোগী এসেছে, খুব খারাপ অবস্থা তার।
#শেষ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টা ধরে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ব্যস্ত না থেকে উপায়ও ছিলো না তার, রোগীর অবস্থা ভালো ছিলো না। বিকাল থেকে করোনা পজিটিভ রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওষুধ দিয়েছেন, লকডাউন করেছেন তিনি।
তিন জায়গা ঘুরে এক রোগীর বাড়িতে গিয়ে দেখেন রোগীর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেনের মাত্রা মাত্র ৩৫ শতাংশ। সাথে থাকা একজনকে দ্রুত পাঠিয়ে দিলেন তিনি হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের সিলিন্ডার আনার জন্য।
#অক্সিজেন সিলিন্ডার আসার পরে অক্সিজেন দেওয়া হলো রোগীকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অক্সিজেনের মাত্রা উঠে এলো ছিয়ানব্বই শতাংশে।
সমস্যা হলো অক্সিজেন সরিয়ে নেবার পরেই। রোগীর শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা সাথে সাথেই নেমে আসতে লাগলো।
অক্সিজেন দিলে রোগী ভালো থাকে, সরিয়ে নিলেই দ্রুত নেমে আসতে থাকে। এই রোগীকে বাসায় রাখা মানে মৃত্যু নিশ্চিত, এটা ভেবে রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। হাসপাতালে নিয়ে এসে এই রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে কেটে যায় আরো কয়েকটা ঘণ্টা।
এরপর পিপিই পরেই রাত এগারোটার সময় খবর পেয়ে নিচে নেমে আসেন ডাঃ নিজাম।
#হাসপাতালের সামনে রাস্তায় এক কিশোর তার নিথর বাবাকে কোলে নিয়ে রাস্তায় বসে আছে। কাঁদতে কাঁদতে সাহায্য চাইছে সবার। তার বাবাকে বাঁচানোর জন্য আকুল আর্তনাদ করছে সে।
আশেপাশে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কেউই সাহায্য করছে না।
ডাঃ নিজাম দ্রুত গিয়ে রোগীর নাড়ি চেক করলেন। পালস নেই। রোগীকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে সিপিআর দেওয়া শুরু করলেন তিনি। একটা সময় পরে গিয়ে পালস পেলেন। তখনও সিপিআর চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সারাদিনের ক্লান্তির পরে এই কষ্টকর কাজটা করার জন্য শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই তার।
তারপরেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
বিকাল থেকে পিপিই পরা, মুখে এন-৯৫ মাস্ক। ক্লান্তির সাথে শ্বাস নিতেও অসুবিধা হচ্ছিলো তাঁর। একটা সময় পরে গিয়ে আর পারেন না তিনি। তিনি ক্লান্ত হয়ে থেমে যেতেই কিশোর ছেলেটা দায়িত্ব নেয়। পাশে থেকে দেখে বুঝে গেছে কীভাবে সিপিআর দিতে হয়। বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টায় ক্রমাগত সিপিআর দিয়ে চলে সে। কিছুতেই মরতে দেবে না সে তার বাবাকে।
পাশে বসে রোগীর দিকে নজর রাখছিলেন ডাঃ নিজাম। হঠাৎ করেই রোগীর চোখ স্থির হয়ে গেলো। এটা দেখেই দ্রুত পালস চেক করলেন তিনি। পালস নেই। তাঁর চোখের সামনেই শেষ নিঃশ্বাস ছেড়ে রোগী চলে গেছে অন্য কোনো ভূবনে।
বাচ্চা ছেলেটা তখনও সিপিআর দিয়ে চলেছে। ওর কাঁধে আলতো করে হাত রাখলেন তিনি। ডাক্তারের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ছেলেটা, তারপরে বাবার মুখের দিকে। স্থির হয়ে গেলো তার হাত দুটো। অনভিজ্ঞ জীবনের সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতাটা সয়ে গেলো সে নীরবে… 😢
বাবা তার ফিরবে না আর কখনো…..
এখানে যে ছবি দুটো দেখছেন, সেটা হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রবেশমুখের রাস্তায় নিথর লাশের সামনে তীব্র হতাশায় হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছে ডাঃ নিজাম আর রোগীর ছেলে।
কোনো মানুষের লাশ নয়, সদ্য মৃত করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশের সামনে বসে আছে যেনো তারা.. 😢
-সংগৃহীত





