শিক্ষাঙ্গন

কিছু অপ্রিয় সত্য কথা ও আপনার বিবেচ্য (হাতে কামাই থাকতেই দান/সাদকা করুন)

 

কিছু অপ্রিয় সত্য কথা ও আপনার বিবেচ্য

(হাতে কামাই থাকতেই দান/সাদকা করুন)

——————————————————-

মোঃ মিজানুর রহমান পোদ্দার ।

১।   আপনার যখন প্রচুর টাকা পয়সা ইনকাম থাকবে, বিভোর থাকবেন জীবনের সাজ-সজ্জা ও অট্রালিকা গড়ার দিকে তখন হয়তো মনটা দান/সাদকার জন্য/গরীব দুঃখী মানুষের প্রতি নরম হবেনা, সহজে গলবেনা। আর যখন শরীরটা নরম হবে, গতরের চামড়া ঢিলে হতে শুরু করবে, বয়সটা ৫০+ বা ৬০+ হবে তখন হয়তো টাকা পয়সা ইনকামের প্রবাহ থাকবেনা-তবে মন চাইবে জীবনের প্রথম না চাওয়া কাজগুলো করতে, কিন্তু ততদিনে সংসারের, পরিবারের সব কিছু চলে যাবে বউ সন্তানদের হাতে, আপনি শুধু বেকার ও সংসারের একজন অতিরিক্ত বৃদ্ধ মানুষ হবেন। অথবা দিনরাত্রি স্রষটাকে ভুলে প্রথম জীবনে যা কামিয়েছেন তা হয়তো শেষ জীবনে চিকিৎসা বাবদই ব্যয় করতে হচ্ছে। দৈনিক বাজারের খরচের ব্যাগের চাইতে হয়তো ঔষধ কেনার খরচটাই বেশি হয়েছে। সংসারের মাসিক খরচের চেয়ে চিকিৎসা ব্যয় দশ গুনও বেড়ে গেছে। এখন হয়তো অনুশোচনায় দুকে দুকে নিজের কাছে নিজেকে প্রতারকই ভাবছেন, কেননা একদিন নিজ শ্রম ও ঘামের কামাই নিজ হাতে খরচ করার যেমন ঢের সুযোগ ছিলো তেমনি মসজিদ, মকতব, এতিম, এতিমখানাতে এবং অসহায় মানুষদেরকে প্রান উজাড় করে দান করারও অঢেল ক্ষমতা ছিলো আপনার। সেদিন সংসারের যে মায়াটানে আপনি নিজের জন্য কিছু করতে পারেননি আজকে জীবনের  শেষ বয়সে তাই হয়েছে আপনার বড় অনুশোচনার কারন। এটা যদি আপনি এখনই বুঝেন তবে ঐ পরিনতি বরং আপনাকে শান্তিতে রাখবে।

 

২।   মানুষের চাওয়া ও পাওয়া সেদিনই শেষ হবে যেদিন তার দেহ হতে প্রানবায়ু উড়ে যাবে তার আগে নয়। সন্তান, সম্পদ ও হায়াত এ তিনটি আদম সন্তানের অফুরন্ত দাবী। আমরা হয়তো প্রত্যেকে যখন বুঝতে শিখি ইবাদত করতে হবে, দান/সাদকা করতে হবে তখন আমাদের মাঝে বুঝ থাকে, হাতে মোয়া থাকেনা। গতানগতিক জীবনে জীবন একদিন সকল চাওয়া-পাওয়া ও বন্ধন ছিড়ে ক্ষয়ে যাবে, কি থাকবে আপনার ও আমার। পৃথিবীতে একজন নেক সন্তান রেখে যাওয়া  হলো সবচে বড় সাদকায়ে জারিয়াহ। তারপর দান/সাদকা। আমরা মনে করি, এককভাবে শুধু নামাজ, রোজা পালন করলেই জান্নাত জুটে যাবে, ইসলামে নামাজ ও রোজা পালন করার জন্য যেসব মৌলিক কথাগুলো বিদ্যমান তার সাথে হক্কুল ইবাদ, সাদকায়ে জারিয়া এবং আমলে সালিহার কাজ রয়েছে যা ইবাদতকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছে দিবে। রাসুল (সাঃ) এতোসব ইবাদতের সাথে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে অধিক গুরুত্বের সাথে দেখতেন।

 

৩।    একজন মানুষকে পরিপূর্ণ বা আলোকিত মানুষ হতে হলে যেমন তাকে শিক্ষা নামক নিয়ামক হতে সু শিক্ষা অর্জন করতে হয় ঠিক তেমনি একজন মানুষকে ইবাদতকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছাতে হলে পরিবারের, প্রতিবেশির, সমাজের দুস্থ, অসহায় ও আত্নীয়দের হক আদায়ের মাধ্যমেই পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে হয়। পাঠক, এ কথা যখন আমরা বুঝতে ও ভাবতে শিখবো তখন হয়তো জীবন প্রভাতের সোনালী সূর্যটা অস্তমিত হতে চলবে, খুব দ্রুত ঘনিয়ে আসবে জীবন সূর্যাস্তের শেষলগ্নটা। দিকবিদিক হতে পারবেন, ব্যাকুল হতে পারবেন, ফেলে আসা অতীত অনেক পিছনে থাকবে কিন্তু মৃত্যু নামক অপ্রিয় সত্য আপনাকে ও আমাকে খুব আপন করেই কাছে ডাকবে, থাকবে বুক দিয়ে আগলে রাখা সংসারের সকল নিয়ামক। পথিক, কি ভাবছেন, সময় করে ভাববেন, দান করবেন, সংসার ঘুচিয়ে উঠে একেবারে আউশা ফসলের মতো গেলাভরে ইবাদত করবেন, কে দিলো আপনাকে এই আশা ? সময় থাকতে নিজ ইনকাম হতে সাদকায়ে জারিয়ার কাজে মন উজাড় করে দান করুন, যা দিবেন তাই থাকবে আপনার আর যা নিয়ে ঘরে ফিরবেন তা কখনো বসতঘর হতে মসজিদের দিকে ফিরবেনা।

 

(১০ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার, ঢাকা)।

 

 

 

 

 

 

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker