জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর কালো গাড়ী।

বঙ্গবন্ধুর কালো গাড়ী।

১৯৭৫ সনে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার স্বার্থে বঙ্গবন্ধু তিনটি সরকারী গাড়িতে যাতায়াত করতেন; তার মধ্যে একটি ছিলো কালো রঙের। কোন দিন কোন গাড়িতে চড়বেন, সেটা তাঁর প্রটোকলের লোকরাই ঠিক করতো। ১৪ আগস্ট সারাদিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় গণভবন থেকে ৩২ নম্বরের বাড়িতে ফেরার জন্য সেদিন বঙ্গবন্ধুকে নিতে এসেছিলো একটি কালো গাড়ি। গাড়িটি দেখে কেমন যেন বিমর্ষ বোধ করেছিলেন জাতির জনক এবং তিনি মন্তব্য করেন, ‘আজকে কালো গাড়ি’। 

আমার শোনা ওটাই তাঁর শেষ মন্তব্য’ — বলেছেন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।বাসস’ এর কাছে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো একজন অবিচল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও থমকে গিয়েছিলেন শেষ বারের মতো কালো গাড়িতে উঠতে গিয়ে! এটা একটা আশ্চর্য্য বিষয়। 

তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতোই তাঁকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গিয়েছিলাম আমি সহ কয়েকজন। সেদিন খুবই বিষন্ন মন নিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

মৃত্যুর আগে প্রতিটি নেক বান্দা কেমন করে যেন বুঝে ফেলে যে আল্লাহর কাছে তাঁর ফেরার সময় হয়ে গিয়েছে। মৃত্যুর সময় প্রত্যেক মানুষ মৃত্যুর ফেরেশতাকে দেখতে পায়, এবং অনেক মানুষ মৃত্যুর আগেই তাদের উপস্থিতি অনুভব করে। 

সেদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু বাসায় ফিরে আসার পর খন্দকার মোস্তাক এসে বঙ্গমাতাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হাঁসের মাংস খেতে পছন্দ করেন। তাই পাকিয়ে নিয়ে এসেছি।’ 

মোশতাকের হাঁসের মাংস দিয়ে শেষ বড় খানাটি খেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর খাবার সময় মোশতাক বঙ্গবন্ধুর পাশেই বসে গল্প করেছিলেন। মোশতাক হয়তো বুঝতে এসেছিলো সব ষড়যন্ত্র ঠিক মতো চলবে কিনা!! 

এর কয়েক ঘন্টা পরেই সকাল ৫:৩০ মিনিটে ঘাতকের দল বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘিরে ফেলে। চারিদিকে মসজিদে চলছিল তখন ফজরের আজান, –আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম। 

অনুমান করি গণভবন থেকে ফেরার পথে মৃত্যুর ফেরেশতারা এসে বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের কানে সালাম দিয়ে গিয়েছিলো, কালো গাড়ী দেখে তাই তাঁর অবচেতন মন বিষণ্ণ হয়েছিলো।

আর রাতের খাবারের সাথে এসেছিলো স্বয়ং ইবলিশ, বাংলাদেশের মুসলমানদের এতিম বানাবে বলে। ইবলিশের ফেতনা কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।

বঙ্গবন্ধুই পেরেছিলেন দেশে প্রত্যাবর্তন করেই শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে বলতে, ম্যাডাম, ভারতীয় বাহিনী কবে বাংলাদেশের মাটি ছাড়বে? এক সপ্তাহের মধ্যে আর্মী চলে গিয়েছিল।

তিনি আমাদের জন্যে যে স্বাধীনতা,গর্ব ও আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছিলেন সেইরূপ স্বাধীনতা পৃথিবীর কোথাও কেউ কখনো দেখেনি।

যতোদিন রবে 

পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান

ততোদিন রবে কীর্তি তোমার 

শেখ মুজিবুর রহমান

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker