জাতীয়

‘ব্যাগ দেখলে টের পাই ভেতরে টাকা আছে কিনা বিস্তারিত দেখুন ‘

’ব্যাগ দেখলেই আমরা টের পাই ভেতরে টাকা আছে কিনা। ব্যাংকের কাউন্টারে আমাদের লোকজন সেট করা থাকে। ক্যাশ কাউন্টার থেকে বেশি টাকা যারা তোলে তাদের পিছু নিই। তারপর সুযোগ বুঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে আমাদের মাইক্রোবাসে তাদের তুলি। গ্রেফতার বা ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে তাদের দূরে কোথাও নামিয়ে দেই।’অকপটে এসব কথা স্বীকার করে বাদল হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। চার সহযোগীসহ যাকে সোমবার বিকেলে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবির (পূর্ব) একটি দল। তার অপর সহযোগীরা হলো আলামিন (২৩), বশির (৪২), লিটন (৪০) ও আব্দুর রব (৫৫)। মঙ্গলবার তাদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করে ডিবি। আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এই চক্রটি র‌্যাব পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ ছিনিয়ে নিতো। তারা মূলত মতিঝিলকেন্দ্রিক বিভিন্ন ব্যাংকগুলোতে ওত পেতে থাকতো। তাদের কাছ থেকে র‌্যাব লেখা দুটি জ্যাকেট, একটি আগ্নেয়াস্ত্র, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ওয়াকিটকি, এক জোড়া হ্যান্ডকাফ ও একটি নোয়াহ মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আতিকুল ইসলাম বলেন, ’মতিঝিল এলাকায় ভুয়া র‌্যাব-পুলিশ পরিচয় দিয়ে একাধিক ছিনতাইকারী চক্র ছিনতাই করে আসছিল। আমরা দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর এই চক্রটিকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করেছি। তারা জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।’ তিনি বলেন, ’মতিঝিল এলাকায় এ রকম আরও একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। দুটি গ্রুপকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরও গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।’ডিবি সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনীর আল-হেলাল জোন ৩ নম্বর গেটের সামনে একটি নোয়াহ মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-ঠ-১১-৫৩৫২) দেখে সন্দেহ হয়। এ সময় মাইক্রোবাসের ভেতরে ও বাইরে থাকা ব্যক্তিরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে তাদের সহযোগী কবির (৩৫), খোকন (৩৮) ও আমীর (৩৮) পালিয়ে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তাদের দলনেতা হিসেবে কাজ করে বাদল। তারা র‌্যাব লেখা জ্যাকেট তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছিল। ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের কৌশলের বিষয়ে দলনেতা বাদল জানায়, তারা ৮ থেকে ১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক টার্গেট করে। এরপর দলের কেউ কেউ ব্যাংকের ভেতরে গিয়ে ক্যাশ কাউন্টারের সামনে লেনদেন করার ভঙ্গিতে অপেক্ষা করে। কেউ নগদ টাকা তুলে বের হলে সে মোবাইল ফোনে অপর সহযোগীদের জানিয়ে দেয়। এরপর মাইক্রোবাস নিয়ে তারা টার্গেট করা ব্যক্তির পিছু নেয়। তারপর সুযোগ বুঝে ওই ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা দুটি ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। যার মধ্যে গত সপ্তাহে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের সামনে থেকে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা একটি। এছাড়া মাসখানেক আগে পুরান ঢাকার আল-রাজ্জাক হোটেলের সামনে থেকে এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ৬০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। গ্রেফতার হওয়া বাদলের ভাষ্য, তারা টার্গেট করা ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলেই হাতে হ্যান্ডকাফ এবং চোখ ও মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর সঙ্গে থাকা টাকা নিয়ে রাজধানীর বাইরে ফাঁকা কোনও রাস্তায় নামিয়ে দেয়। কেউ ঝামেলা করার চেষ্টা করলে তার চোখে মলম বা মরিচের গুঁড়া দেয়, যাতে কেউ গাড়ি থেকে নামানোর পর চিৎকার করতে না পারে। ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এই চক্রটি শুধু ব্যাংক না, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বড় বড় শো-রুমের আশেপাশেও ওত পেতে বসে থাকে। সাধারণত সঙ্গে ওয়াকিটকি আর হ্যান্ডকাফ বা কোমরে অস্ত্র থাকলে সবাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সিভিল ড্রেসের সদস্য বলে মনে করে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা নিয়মিত ছিনতাই ও ডাকাতি করে বেড়াতো। গ্রেফতার হওয়া চক্রটিকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছিল। এর আগেও তারা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিল। রেখা নামে এক নারী সদস্য রয়েছে এই চক্রটির সঙ্গে। তার কাজ হলো কেউ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলে তাকে জামিনের মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনা। ওই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রটি মতিঝিলকেন্দ্রিক হুন্ডি ব্যবসায়ীদেরও টার্গেট করে। কারণ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের টাকা ছিনিয়ে নিলে তারা সাধারণত পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। এজন্য হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে নিরাপদ টার্গেট। মতিঝিলে এই ধরনের আরও ৪ থেকে ৫টি গ্রুপ রয়েছে। এই গ্রুপগুলোর নেতৃত্ব দেয় শাওন, মিন্টু, খালেক ও জহির। তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।সূত্র:- Bangla Tribune

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker