চান্দিনা

চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কমিটি বিহীন ৭বছর; প্রধান শিক্ষক নেই ১২ বছর ধরে

চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কমিটি বিহীন ৭বছর; প্রধান শিক্ষক নেই ১২ বছর ধরে

 

 

যে কোন বিদ্যালয় সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন একজন দক্ষ প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদ। আর কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদরে অবস্থিত চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ বছর নেই কোন কমিটি আর ১২ বছর যাবৎ নেই প্রধান শিক্ষক। 

 

দীর্ঘ এক যুগ যাবৎ ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে চলছে প্রধান শিক্ষকের কার্যক্রম। আর পরিচালনা পর্ষদ বিহীন সাত বছর যাবৎ মাঝিহীন নৌকার ন্যায় চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে খুড়িয়ে চলছে বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম। এতে শিক্ষার মান অনেকাংশেই ব্যহত হচ্ছে। চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও । 

 

চান্দিনার নারী শিক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ডা. সৈয়দা ফিরোজা বেগম। ১৯৩০সালে চান্দিনার গোবিন্দপুর এলাকায় সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। চান্দিনা উপজেলায় নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারী উপজেলা সদর নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করেন বালিকা বিদ্যালয়। 

প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে নিজ তত্বাবধানে বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় জেলা জুড়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছিল চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ২০০০ সালে ৮নভেম্বর তার মৃত্যুর পর থেকে দেখা দিতে থাকে নানা জটিলতা। তাঁর মৃত্যুর পর বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতির পদটি শূন্য হলে ওই পদে স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর আপন ভাতিজা সৈয়দ ফয়জুর রহমান। ২০০৩ সালে পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের পর নতুন সভাপতির দায়িত্ব পান এবিএম সিরাজুল ইসলাম। 

 

পরবর্তিতে শুরু হয় বিদ্যালয়ের রাজনৈতিক চর্চা। ২০০৯ সালে সৈয়দ ফয়জুর রহমান আবারও দায়িত্ব নিয়ে শেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। ওই নির্বাচনের পর নির্বাচিত সদস্য ও পরাজিত সদস্যদের মধ্যে দুইটি রাজনৈতিক দলের মতাদর্র্শে ভিন্নতা থাকায় শুরু হয় মামলায় আইনি জটিলতা। দীর্ঘ ৭ বছরেও সভা করতে পারেনি নির্বাচিত কমিটি। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। স্থবির হয়ে পড়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম। 

 

এদিকে, ২০০৬ সালে বিদ্যালয়ের তৎকালিন প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার নাহা’র মৃত্যুতে প্রধান শিক্ষক পদটি শূন্য হয়। দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও বেশি দিন যাবৎ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন ৪জন শিক্ষক। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক পদ সহ বেশ কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। এনটিআরসি থেকে চলতি বছর ৭ জন শিক্ষক নিয়োগের পূর্বে শিক্ষক সংকটে বেশ হিমশীম খেতে হয়েছে। কমিটি না থাকায় কর্মচারী পদেও লোক নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। 

 

বিদ্যালয়টিতে কোন সুষ্ঠু তদারকি না থাকায় দিনের পর দিন শিক্ষার মান হ্রাস পাচ্ছে। ক্রমশই শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিপর্যয় ঘটছে। ২০১৭ সালের জেএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও ২০১৮ সালে ওই জিপিএ-৫ এর সংখ্যা শূন্য কোটায় চলে এসেছে। আর ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায়  ১৭টি জিপিএ-৫ পেয়ে ৮৫.৯২শতাংশ হারে পাশ করে শিক্ষার্থীরা। তবে ২০১৯ সালে ২৬টি জিপিএ-৫ সহ ৯৮শতাংশ হারে পাশে করে শিক্ষার্থীরা। 

২০১২ সালে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, ওই নির্বাচনে আমি সহ জহিরুল ইসলাম, জাকির হোসেন, মো. শাহজাহান এবং সংরক্ষিত নারী পদে রুমা বেগম নির্বাচিত হয়েছিলাম। কিন্তু ওই নির্বাচনের পর পরাজিত একটি প্যানেল বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। নি¤œ আদালতে রায় আমাদের পক্ষে আসার পর ২০১৬ সালে বোর্ড আমাদেরকে সভা করার জন্য অনুমতি দেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত এক মাসের মধ্যে কোন সভা আহবান না করায় আমরা উচ্চ আদালতে রিট করি। এরই মধ্যে ওই প্যানেলের বাদী কামরুল হাসান অসুস্থ জণিত কারণে মৃত্যু বরণও করেন। ২০১৮ সালে ৩০ অক্টোবর উচ্চ আদালত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে নির্বাচিত কমিটির সভা আহবান করা জন্য নির্দেশ দিলেও তিনি সভা না ডেকে আপিল করেন। যা প্রধান শিক্ষক হিসেবে আপিল করতে পারেন না। 

 

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমিতা দাস জানান, উচ্চ আদালত সভা আহবান করার নির্দেশের পরপর অপর একটি পক্ষ ওই রায়ের স্থগিতাদেশ করে আপিল করেন। সম্পূর্ণ বিষয়টি এখন আদালতের বিচার্য বিষয়। 

 

এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. গাউছুল আজম জানান, একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান হচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান শিক্ষক। আর উপজেলা সদরের এমন গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘ বছরের পর পর নেই কমিটি, নেই প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকও। যারফলে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে এবং লেখাপড়ার মানও বিঘœ ঘটছে। বিদ্যালয়ের সুনাম ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কমিটি নিয়োগ সহ শূন্যপদ নিয়োগ করা একান্ত প্রয়োজন।

 

 

 

 

 

 

    

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker