জাতীয়
শ্রদ্ধাঞ্জলি যে কথা হয়নি বলা আশরাফ ভাই

শ্রদ্ধাঞ্জলি
যে কথা হয়নি বলা
************************
আশরাফ ভাই
আসছে ৩০ জুলাই আপনার মহাপ্রয়াণ দিবস। এই দিনে লাখো মানুষকে কাঁদিয়ে পরম করুনাময়ের ডাকে আপনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এখনো আপনার জন্য চান্দিনায় মানুষ চোখের জলে বুকভাষায়। এখনো আপনার ছবি প্রতিটি ঘরে ঘরে পরমযত্নে শোভা পায়।
আপনি ফুল ভালোবাসতেন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ফুলের বাগান করতে অণুপ্রেরণা দিতেন। আমি যখন চান্দিনা মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছিলাম । আমাকে বললেন, একটি ফুলের বাগান করতে। আমি খুশি হলাম। আমাদের কলেজের অফিস সহায়ক আল আমিনকে নিয়ে শুরু করলাম ফুলের বাগান করা। নিমসার, ছায়কট থেকে ফুলের চারা এনে বাগান করলাম। আপনি দেখে খুশি হলেন। তারপর আবার বললেন, চারপাশে গ্রিল দিতে। তখন রারিরচরের শহীদের ( যাকে ৮৬ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি তার শরীর সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপি চান্দিনা বাজারে শহীদের দোকান পুড়িয়ে দিয়েছিল। শহীদ আলআমিনে গর্বিত বাবা। আশরাফ ভাইয়ের পরিবার ) নতুন গ্রিলের দোকান। আলআমিনকে নিয়ে বাগানের চারপাশে গ্রিল দিলাম। শহীদের কাছ থেকে বাকিতে মালামাল এনে অল্প অল্প করে শোধ করে দিই। শহীদও আমাকে একাজে উৎসাহ দিতেন। আবার একদিন বললেন,গ্রিলে রং করতে। আলআমিনকে দিয়ে গ্রিলে রং করলাম। আমি তখন কলেজ হোস্টেলের দায়িত্বে। প্রতিদিন সকালে আলআমিনকে নিয়ে কয়েক মাইল হাঁটা। তারপর আলআমিনকে নিয়ে গাছে পানি দেয়া। একদিন বাগানে ফুল ফোটলে আপনি দাঁড়িয়ে ভালো করে দেখলেন। খুশিতে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আলআমিন আপনাকে সালাম করলো। কলেজের সকল কাজে শিক্ষক, অফিস সহায়ক সবাই আমাকে সহযোগিতা করতেন। কলেজের প্রতিটি ইট বালুর সাথে আমার সম্পর্ক। এখনো পরোক্ষভাবে আমি কলেজের সাথে আছি। সবাইকে ভালোবাসি। সবার খোঁজখবর নিই। প্রতিবছর আমরা আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে কয়েকদিনের জন্য ভ্রমনবিলাসে চলে যাই।
আশরাফ ভাই,
আপনি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে বেড়ে ওঠেছেন। আপনার বাবা ছিলেন দিল্লির দেওবন্দ থেকে পাশ করা একজন মাওলানা।মুরব্বিদের কাছে শুনেছি আপনার বাবা মাওলানা ইসমাইল হোসেন মুন্সি ছিলেন একজন বুজুরজ্ঞান ব্যক্তি। আপনি ইসলামের সকল নিয়ম কানুন অত্যন্ত কঠোর ভাবে পালন করতেন। আমি বিশ্বাস করি আপনি জান্নাতুল ফেরদৌসের সেই ফুলের বাগানেই আছেন।
১৯৬৮ সাল থেকে আপনার হাত ধরে আমার বেড়ে ওঠা। তিপান্ন বছর আপনার সাথে থেকে সত্য এবং সুন্দরকে চিনতে পরেছি। আমার বলতে দ্বিধা নেই আপনিই ছিলেন আমার সকল অনুভব। সকল স্পন্দন। সকল স্পর্ধা। সকল আলোর সাহস । আপনিই ছিলেন আমার গুরু। আমি আপনার ভাবশিষ্য।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ——
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে
হৃদয় তোমারে পায়না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।
৬/৭/২০২২





