তিতাস

কাবিন ছাড়া বিয়ের ২৫ দিনেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল স্কুলছাত্রী ফাহিমা।

কাবিন ছাড়া বিয়ের ২৫ দিনেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল স্কুলছাত্রী ফাহিমা।

 

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কোরপাই গ্রামে ফাহিমা (১৮) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্র্থীর বিয়ের ২৫ দিনের মধ্যে স্বামী পরিবারের নির্যাতন ও জোর করে বিষপান করিয়ে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখে। পরে মুমুর্ষূ অবস্থায় ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার। এঘটনার পরই হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়ে যায় স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।

নিহতের পরিবার সুত্রে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কোরপাই গ্রামের জাহাঙ্গীরের মেয়ে স্থানীয় নিমসার উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ফাহিমা। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে একই গ্রামের প্রতিবেশী ফজলু মিয়ার ছেলে নিমসার বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফয়সাল (২২) নানাভাবে ফাহিমাকে উত্যক্ত করে আসছিল। গত ২২ আগষ্ট সকালে ফয়সাল ফাহিমাকে ঘরের সামনে থেকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। খোঁজাখুজি করেও না পেয়ে ২৩ আগষ্ট পরিবারের পক্ষ থেকে বুড়িচং থানায় অভিযোগ করার খবর পেয়ে অপহরণকারী ফয়সালের পিতা ফজলু মিয়া,বড় ভাই সাদ্দামসহ গ্রামের কিছু লোক এসে মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। এরপর ছেলের কাছে মেয়েটির বিয়ে দেওয়ার সম্মতি আদায় করে ২৫ আগষ্ট রাত ৮ টায়  ফাহিমাকে কিছু সময়ের জন্য তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। রাত ৯ টায় স্থানীয় সমাজপতিদের উপস্থিতিতে কাবিন ছাড়াই হুজুর ডেকে মুখে মুখে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে। এসময় মেয়ে পক্ষকে সমাজপতিরা জানায়,আগামী ৫ দিনের মধ্যে কাবিনসহ যাবতীয় আনুষ্ঠনিকতা সম্পন্ন করা হবে। ২৭ আগষ্ট সে বাবার ঘরে যেতে চাইলে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন বাঁধা দেয় ও মারধোর করলে এক পর্যায়ে ফাহিমা দৌড়ে বাবার ঘরে চয়ে আসে। নিহতের খালাতো ভাই কাদের জানান, এসময় বাবা,মাসহ তিনি বুঝিয়ে ফাহিমাকে স্বামী গৃহে পাঠিয়ে দেন। বন্ধ করে দেয় পরিবারের লোকজনদের সাথে যোগাযোগ। এরপর গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ৮ টায় ফাহিমার বড় বোন শারমিন ছোট বোনের স্বামী ফয়সালের কাছে পাওনা ১০ হাজার টাকা  ফেরত চাইলে ছেলের মায়ের সাথে তর্কবিতর্ক হয়। এরপর ফয়সাল,তার মা,বাবা,বড় ভাই সাদ্দাম,ছোটভাই ফয়েজ,সাদ্দামের স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন নানাভাবে তাকে অত্যাচারের এক পর্যায়ে মুখে বিষ ঢেলে দেয় । এরপর তাকে নিয়ে যায় পাশ্ববর্তী চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নিহতের চাচাতো ভাই হালিম,ফুফাতো বোন তানিয়া জানান, চান্দিনা হাসপাতালে দু’দিন চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার কথা বলে  ফাহিমাকে ফয়সাল বাড়িতে নিয়ে আসে। ১৬ সেপ্টেম্বর  বুধবার সন্ধ্যায় ফাহিমার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে অজ্ঞাত কারণে কুমিল্লা মেডিকেল বা উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য স্থানীয় কোন হাসপাতালে না নিয়ে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে রাত ১১ টায় ভর্তি করার এক ঘন্টারও কম সময়ে তার মৃত্যু হয়। এঘটনার পরপরই হাসপাতালে থাকা নিহতের স্বামীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। নিহতের খালাতো ভাই কাদের আরো জানান, লোক মারফত খবর পেয়ে বুধবার গভীর রাতেই নিহতের পিতা জাহাঙ্গীরসহ পরিবারের লোকজন ঢাকায় হাসপাতালে ছুটে আসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ময়না তদন্ত শেষে বিকেলে কোরপাই গ্রামে লাশ নিয়ে আসার পর সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন সম্পন্ন করে। এদিকে বাড়িতে লাশ আনার পর ফাহিমার বাবা-মা দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

নিহত ফাহিমার সুরুত হাল বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে ঢাকা শেরে বাংলা নগর থানার এসআই মোবারক আলী জানান,প্রাথমিকভাবে নিহতের মুখে বিষের আলামত পাওয়া গেছে।

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker