জেলার খবর

করোনাকাল : উচ্চ রক্তচাপ এবং মৃত্যু

করোনাকাল : উচ্চ রক্তচাপ এবং মৃত্যু

চিকিৎসক ও গবেষকদের অনেক ধারণাই এখন আর খাটছে না কোভিড ১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে ।দেশে করোনা শণাক্তের ১৬ তম মাস পূর্ণ হলো আজ ।প্রথম দিকে সংক্রমণ বিস্তারের গতি ধীর থাকলেও যত দিন যাচ্ছে ,তা তীব্র হচ্ছে ।দেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫,৫৯৩ জন ।গত ২৪ ঘন্টায় নতুন শনাক্ত রোগী ১১হাজার ১৬২ জন ।মারা গেছেন ২০১ জন ।প্রথম ১৫ মাসের তুলনায় ১৬ তম মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই অনেক বেড়েছে ।করোনা সংক্রমনে এক দিনেই দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু দেখলো দেশ ।মহামারি শুরুর পর থেকে দেশে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ।সংক্রমন ঠেকাতে চলা কঠোর বিধিনিষেধের কোনো ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে না ।নতুন রোগী ও শনাক্তের হার বাড়ছেই ।দুইদিন ধরে শনাক্তের সংখ্যা ১১ হাজারের ওপরে ,আর পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩১ শতাংশের বেশি ।এই পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৯,৭৭,৫৬৮ এবং মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৫,৫৯৩ জন ।

করোনাভাইরাসের সংক্রমন মোকাবিলার ক্ষেত্রে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।সংক্রমন মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমাদের মৌলিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতির ফল এখন পোহাতে হচ্ছে ।অপ্রতুল অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা,হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার ঘাটতি এখনো রয়ে গেছে ।করোনাভাইরাসের সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে দেশজুড়ে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের প্রভাব এখনো দৃশ্যমান হয়নি ।নতুন রোগী পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার এবং মৃত্যু সবই বেড়ে চলেছে ।সংক্রমন কতটুকু কমবে তার সবকিছু নির্ভর করছে বিধিনিষেধ কতটুকু কার্যকর বা মানা হচ্ছে তার ওপর ।ঢিলেঢালা বিধিনিষেধ সংক্রমন প্রতিরোধে কোন কাজেই আসবে না ।কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউনের মতো পদক্ষেপের প্রভাব দেখা যায় সাধারনত এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পর থেকে ।সে হিসেবে রোগী আরও বাড়বে ।আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ মৃত্যু বৃদ্ধির আশংকা আছে ।

ইতিমধ্যে গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন(সামাজিক সংক্রমন)হয়ে গেছে ।এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমন আরও বৃদ্ধির আশংকা আছে ।করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রত্যন্ত অন্চলে ।দূর্গম পাহাড় ,প্রথমে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বা সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদে সংক্রমণের পাশাপাশি আতংকও ছড়িয়েছে ।শহর থেকে দূরে থাকা মানুষের অসহায়ত্ব বাড়ছে প্রতিদিন ।এই অবস্থায় আলোচিত বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে কোমর্বিডিটি ।জানা যায় দেশে উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ:ই উর্ধমূখী ।বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায় উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে যে সমস্ত মানুষের তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি ।

অনেকদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভূগছেন ,এ সমস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে লিঙ্গ বয়স নির্বিশেষে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি ।এই সমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কেন বেশি এই নিয়ে বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে,উচ্চ রক্তচাপ মানেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ।উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন ইতালির ক্ষেত্রে তা ৭৬ শতাংশ। যাদের বয়স ৬০ পেরিয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুই তৃতীয়াংশই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভূগছেন বিশ্বজুড়ে ।

উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে মাস্ক না পরা আত্মহত্যার শামিল ।যেহেতু উচ্চ রক্তচাপের আক্রান্ত ব্যক্তির
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল থাকে তাই জীবানু প্রবেশ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও ক্ষীণ হয়ে যায় ।সেক্ষেত্রে স্যানিটাইজার এবং বার বার হাত ধোয়ার নিয়ম মেনে চলতে হবে ।ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করলে আগে প্রতঙ্গগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে সহজেই ।অতএব মাস্ক না পরে বেরোলে সংক্রমণের সঙ্গে মৃত্যুর আশংকাও বেশি ।

এজন্য উচ্চ রক্তচাপের সামান্য সমস্যা রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।ওষুধের ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম চলবে না ।ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত ওষুধ সেবন সহ স্বাস্থ্য বিধি সমূহ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে ।৩০ বা ৪০ এর কোঠায় যাদের বয়স উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে করোনার এই সময়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তাদেরও ।মাস্ক পরা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বার বার হাত ধোয়ার সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে ভীড় এড়াতেই হবে ।ভীড়ে মাস্কবিহীন কোনও উচ্চ রক্তচাপের রোগীর যাওয়ার অর্থ মৃত্যুকে ডেকে আনা ।উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা মানে কিডনির স্বাভাবিক ক্রিয়ায় প্রভাব পড়বেই ।নজর রাখতে হবে সেদিকেও ।এছাড়াও স্ট্রোক ও হার্ট এ্যাটাক হতে পারে যেকোনও সময় ।এজন্যই
নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ মনিটর করা দরকার ।

মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত দেশে সংক্রমনের হার ক্রমশই উর্ধমূখি ।এখনও কমার
লক্ষণ নেই ,সংক্রমণ এমনি এমনি কমবে না ।সন্দেহভাজন রোগী শনাক্ত করা ,নমুনা পরীক্ষা ,কন্টাক্ট ট্রেসিং ,আইসোলেশন ,কোয়ারেন্টিন সংক্রমণ নিয়ণ্ত্রণের এসব মৌলিক কাজ
গত ১৫ মাসে মাসে গতি পায়নি ।এমতাবস্থায় ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি সমূহ মেনে চলার বাইরে বিকল্প কিছু নেই ।

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker