জাতীয়
রম্যকথন:কোরবানি প্রসঙ্গ প্রফেসর মোঃ জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী

রম্যকথন:কোরবানি প্রসঙ্গ
প্রফেসর মোঃ জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী
কিরে ভাই, কোরবানি তো আইয়্যা গেলো, ভাবনা চিন্তা কি কিছু করছো, নাকি এবার কোরবানি দিবা না? কি কও ভাই, ছেলে-মেয়ে, আত্নীয়-স্বজন, জামাই-বেয়াই সবইতো আছে। তাছাড়া আল্লায় সামর্থ্যও দিছে, কোরবানি না কইরা কি পারা যাইবো। তয় একখান চিন্তা করছি, মনে মনে স্হির করছি এইবার আর গরু কোরবানি করুম না। একটা খাসি কিন্না তা দিয়া আল্লাহু অাকবর করমু। গরু কেরে কোরবানি করবানা সে কথাতো কইলানা? কি আর কমু ভাই, আমার বাড়ির পাশে একজনে গরুর খামার করছে।অনেক সুন্দর সুন্দর স্বাস্হ্যবান গরুও আছে। কখন গরুরে কি সে খাওয়ায় আর মাঝে মাঝে ইনজেকশন দিয়া গরুর শরীরে কি যে ডুকায় বুঝবার পারি না। খাদ্য পচা বাসী কইরাও খাওয়ায়। পচা খাবারের মধ্যে নাকি হেকমত আছে। এমন পচা গন্ধ যে আমাদের থাকাও দায়। এতসব দেইখ্যা আমার গরুর প্রতি গেন্না ধইরা গেলো। তাই চিন্তা কিইরা স্হির করছি গরু দিয়া এবার কোরবানি করুম না। যদি কোনদিন নিজে পালবার পারি তখন না হয় দিমু,এবারের মত থাক।
তয় তোমার চিন্তাডা খারাপ না। কিন্তু আমি যদি খাসির বয়ান শুনাই তখন তুমি কি কইরবা। আবার কি বয়ান শুনাইবা তুমি? এখানেও কি ভেজাল ঢুইক্কা গেছে নাকি? আরে ভাই খাসিরে নাকি ডায়াবেটিস রোগে ধইরা গেছে, খালি পেশাব করে। কি করে?আরএ বুঝনা বোকা খালি পেশাব করে। এমনভাবে শুরু করে থামান যায় না। কি কও তুমি, এ রোগতো ছাগলের হয় এমন কথা কখনও শুনি নাই। এ রোগতো মানুষের হয়। দেহোনা সকাল বেলা নামাজ পইয়া মানুষ হাঁটতে বাহির হইয়া যায়। কি নারী কি পুরুষ সবাই হাঁটা-হাঁটি করে। কখনো আস্তে আবার কখনো জোরে হাঁটে। কেউ আবার হাত-পা নাড়াইয়া, অঙ্গভঙ্গি কইরা হাইটা যায়। জিজ্ঞাস করলেই কয়, ভাইরে ডায়াবেটিসে ধরছে। তয় এ রোগ আবার ছাগলেরে ধরলো কেমনে? দুর বোকা, ছাগলেরে ধরে নাই -মানুষে ধরাইছে। কেমনে ধরাইছে কওতো দেহি। কইবার পারিনা ভাই, মনে কষ্ট লাগে; দেইখ্যাও কষ্ট পাই। কি জানি লম্বা একটা নল ছাগলের মুখ দিয়া পেটের ভিতর পর্যন্ত ডুকাইয়া বড় একটা সিরিন্জ দিয়া খালি পানি খাওয়াইতে থাকে। ছাগলটার কি যে কষ্ট, পানি খাওয়াইতে-খাওয়াইতে যখন পেট টা বড় হইয়া যায় তখন বাজারে তুইল্যা বলে ভাই, এক নম্বর খাসি। এই খাসি আমি নিজে পালছি, ঘাস ছাড়া কিছুই খাওয়াই নাই। নিয়া যান, দেখছেন না পেটের মধ্যে চর্বি, যেন তেলে ভাসতেছে। হঠাৎ দেখা গেলো, ছাগলটা এক বোতলের সমান পেশাব কইরা তোমার কাপড় -চোপড় নষ্ট কইরা পালাইছে। তুমি জিজ্ঞাস করলা, কিরে ভাই এত পেশাব করে কেরে? রেডিমেড উত্তর, ভাই বাড়ি থেকে হাঁটাইয়া বাজারে অানছি। বাজারে আইয়াই শুধু পানি আর পানি খাইছে। আরো বেশি কিছু জিজ্ঞাস করলে বলবে-আপনি খাসি কিনবার অাইছেন না দেইখবার অাইছেন। নিবেন কিনা কন, না হইলে এখান থেইক্কা সরেন, আপনার মত কাস্টমার আমার দরকার নাই।
কেউ কেউ বলে মানুষের জন্য ডায়াবেটিস এখন জাতীয় রোগ। যারা হাঁটতে পারেন না এই অজুহাতে প্রতিবেশী, অাত্বীয়-স্বজন, মাতা-পিতার খবর নেয় না তারাও ডায়াবেটিস হইলে দৌঁড়াইয়া মাইলের পর মাইল হাইট্যা যায়। ডাক্তার কইয়্যা দিছে ঔষধপত্র যা খাইবেন খান, তবে না হাঁটলে কোনো লাভ অইবো না। এখন খালি হাঁটে, ঘড়ির টাইম ধইরা হাঁটে, গায়ের ঘাম না ঝরা পর্যন্ত হাঁটে। এখন আর কোন অজুহাত নাই। সৃষ্টিকর্তার এও এক অমোঘ বিধান। তয় মানুষ এখন নিজের রোগকে পশুর মধ্যে বিস্তারের চেষ্টা কইরা সফল হইতাছে। তুমি বাজার থেইক্যা খাসি কিইন্যা (সবগুলো নয়) বাড়িতে আইন্যা দেইখবা আর কিছু খায়না, খালি পেশাব করে। ছাগল অসুস্হ হইয়া মারা যাওনের অবস্হা। উপায় নাই গোলাম হোসেন, তখন কি করবা। কোরবানির অাগেই খাসি জবাই কইরা গোশত খাইতে পারবা মাগার কোরবানি হইবনা। পেশাব কইরতে কইরতে ছাগলের জিবন শেষ। হায়রে দুনিয়া, হায়রে মানুষ; কিছু লাভের অাশায় ওজন বাড়ানোর জন্য পশুর প্রতি এমন নির্মম আচরণ মানুষ কবতে পারে যা পশুও করতে পারে না। মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য করবা কি দিয়া?
এবার তুমি বলো কি দিয়া কোরবানি কইরবা? ভাইরে কি সর্বনাইশ্যা কথা। ভাবছিলাম ছাগল দিয়া কোরবানি কইরা নিজে নিরাপদ থাকমু। অহনতো দেখি হেইডার মধ্যেও ভেজাল। তা হইলে উপায় কিরে ভাই?উপায় আছে চলো, মাটির মানুষ আবার মাটির সাথে সম্পর্ক গইড়া তুলি। গ্রামে-গঞ্জে যাইয়া ভালো দেইখ্যা পরিচিত জনের কাছ থেইক্যা একটু বেশি দাম দিয়া হইলেও নির্ভেজাল পশু কিনি। বিক্রেতারে পাঁচশ টাকা বেশি দিলেও খুশি হইবো, তুমি ভেজাল থেইক্যা বাচতে পারবা। না হইলে দালাল থেইক্যা পশু কিইন্যা দালালরে বেশি টাকা পয়সা দিবা অার ভেজাল পশু নিয়া বাড়িতে অাইবা।





