চান্দিনা
চান্দিনায় নির্বাচনী সহিংসতার উত্তাপ; নৌকার অফিস ভাংচুর; ধানের শীষের সমাবেশ পন্ড

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী সহিংসতার উত্তাপ ছড়িয়েছে কুমিল্লা পুরো চান্দিনা উপজেলা জুড়ে। ধানের শীষ প্রতীক সমর্থকদের উপর হামলা ও নৌকা প্রতীক সমর্থকদের উপর হামলা-অফিস ভাংচুরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) উপজেলা দোল্লাই নবাবপুর, বরকরই এলাকায় ধানের শীষ প্রতীক সমর্থিত নেতা-কর্মীদের উপর হামলা ও নবাবপুর আহসান উল্লাহ্ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় সভা পন্ড করেছে ২০দলীয় জোট প্রার্থী। অপরদিকে মহিচাইল বাজারে এলডিপি নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগের অফিস ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। পৃথক ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
২০দলীয় জোট প্রার্থী এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ অভিযোগ করেন, গত ১০ ডিসেম্বর তিনি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এর নিকট নির্বাচনী সভা-সমাবেশের স্থান উল্লেখ করে আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক ওই আবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন। প্রশাসনের অনুমতিতে পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) দোল্লাই নবাবপুর আহসান উল্লাহ্ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশের আয়োজন করে এলডিপি।
ড. রেদোয়ান জানান, ‘গত ১২ ডিসেম্বর বুধবার আওয়ামী যুবলীগের নেতাকর্মীরা একই স্থানে সমাবেশ ডাকে। বিষয়টি আমি সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং থানার অফিসার ইন-চার্জকে অবহিত করলে তাদের অনুমতিক্রমে বৃহস্পতিবার সমাবেশের আয়োজন করছিল আমার লোকজন। এসময় সেখানে স্টেজ করতে বাধা দেয় দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। পরবর্তীতে ফতেহপুর থেকে ডেকোরেট ভাড়া নিয়ে সভা স্থলে স্টেজ করে। দুপুর ২টায় বিভিন্ন স্থানের লোকজন ধানের শীষের মিছিল নিয়ে বরকরই মাদ্রাসার সামনে পৌঁছলে আমার নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে ককটেল বিষ্ফোরণ ও লাঠিচার্জ করে কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আহত করে এবং আমার মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরবর্তীতে আমি নবাবপুর সভাস্থলে পৌঁছার উদ্দেশ্যে নবাবপুর বাজারের কাছাকাছি যাওয়ার পর খবর পেলাম আওয়ামীলীগের লোকজন আমার সভাস্থলে হামলা চালিয়েছে। এসময় সংঘাত এড়াতে আমি আর সভাস্থলে যাইনি। এসব ঘটনায় আমার ৯জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫জন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। আহতদের চিকিৎসা কাজ শেষ করে থানায় মামলা করবো’।
ড. রেদোয়ান আহমেদ আরও জানান, এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে আমার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করার উদ্দেশ্যে এমপি’র ছেলে পুলিশের উপস্থিতিতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বাজারে মিছিল করে। তার কিছুক্ষণ পর মহিচাইল বাজারে তারা নিজেরাই নিজেদের অফিস ভাংচুর চালায়। এদিকে, দোল্লাই নবাবপুর আহসান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনায় নৌকা প্রতীক প্রার্থী অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এর তনয় এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু জানান, ‘ওই বিদ্যালয় মাঠে আমাদের লোকজন সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু যখন জানতে পারলাম তারা পূর্বেই অনুমতি নিয়েছেন তখন আমরা নবাবপুর বাজারে আওয়ামীলীগ অফিসে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় করি। আর হামলার যে অভিযোগ তারা করছেন, তা মিথ্যা। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আওয়ামীলীগের কোন লোকজন তাদের সমাবেশে হামলা চালায়নি। অথচ রসুলপুর বাজার এলাকায় এলডিপি’র লোকজন মটোরসাইকেল শোডাউন থেকে আমাদের লোকজনের উপর ইট-পাটকেল ছুড়ে। এতে আমাদের প্রবীণ ২ জন আওয়ামীলীগ নেতা সহ সাধারণ মানুষ আহত হয়।
মহিচাইল বাজারের আওয়ামীলীগ অফিস ভাংচুর প্রসঙ্গে মহিচাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আবু মুছা মজুমদার জানান, বিকেলে আমাদের ৩জন নেতা-কর্মী মহিচাইল বাজারের আওয়ামীলীগ অফিসে পোষ্টার সাঁটাচ্ছিল। এসময় এলডিপি নেতা-কর্মীরা নবাবপুর থেকে গাড়ি যোগে মহিচাইল বাজারে এসেই আমাদের অফিসে ঢুকে ভাংচুর চালায়। ৩জন নেতা-কর্মীকে আহত করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করে। এ ঘটনায় আমরা থানায় মামলা করবো।’ এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল ফয়সল জানান, ড. রেদোয়ান আহমেদ পূর্ব অনুমতিক্রমে সভাস্থলে সমাবেশ করবেন সেই লক্ষ্যে আমরাও যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় নবাবপুর বাজারে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রেখেছিলাম। কিন্তু ড. রেদোয়ান আহমেদ ঘটনাস্থলে না গিয়েই ককটেল বিষ্ফোরণের অসত্য অভিযোগ করেন। সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে, মহিচাইল বাজারে আওয়ামীলীগের অফিস ভাংচুর করার পর সেখানেও আমরা পুলিশ পাঠিয়েছি। সবগুলো ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে।





