শিক্ষাঙ্গন

কাদুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

কাদুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

১৮৭৫ সালের গোড়ার দিকে কাদুটি বাজারের মধ্যখানে একটি বিশাল বটগাছ রয়েছে।যা আজও অবধি কালের স্বাক্ষী হিসেবে বিদ্যমান।বটবৃক্ষের পাশে মন্দির ছিলো।এই মন্দিরের পাশে গোস্বামী পরিবার এর উদ্যোগে মন্দির ভিত্তিক পাঠশালা তৈরী করেন। পাঠশালা ঘরটি ছিলো জীর্ন কুটিরের মত কুঁড়ে ঘর।এটি গ্রামের প্রথম স্কুল। এ স্কুলে শিক্ষক ছিলেন মন্দিরের পুরোহিত। ভক্তগণের ছেলে-মেয়েরা এখানে পড়াশোনো করত।
১৮৮০ সালে মন্দির ভিত্তিক পাঠশালার পরিবর্তে টোল ভিত্তিক পাঠশালা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল দুইজন।তখন এ অঞ্চলে জনসংখ্যা অত্যন্ত কম ছিল বিধায় স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিলো অতি নগণ্য। শিক্ষকগণ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করত।বাৎসরিক খাজনা হিসেবে শিক্ষকগণের বেতন প্রদান করা হতো।প্রত্যেক অভিভাবক নির্দিষ্ট হারে শিক্ষকদের চাল-ডাল,ধান,মাছ,পান-সুপারি ইত্যাদি নিয়মিত দিতেন। সে সময় অভিভাবকগণ শিক্ষকদের ফেরেস্তাতুল্য সম্মান করতেন।গ্রামের যে কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত করে অ্যাপায়ন করা হতো।তখনকার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী’রা ছিলো বয়স্ক। তাদেরকে কড়া নিয়মের মধ্যে রাখা হতো। এ ব্যাপারে কোনো অভিভাবক গণ বিন্দু মাত্র প্রতিবাদ করতেন না।পাঠ্যপুস্তক ছিলো আদর্শ লিপি বা বাল্য শিক্ষা বই।
১৮৮৫অথবা ১৮৮৬ সালে উবরা (পাইকের করতলা) গ্রামে জনাব তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী নামক একজন প্রভাবশালী জমিদার মহোদয় ওনার ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করানোর নিমিত্তে এলাকাবাসীদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করিয়া স্কুলটি কাদুটি বাজার হতে আধা মাইল দক্ষিণে নিজ বাড়িতে স্থানারিত করেন।এ ক্ষেত্রে জমিদার মহোদয়ের যুক্তি হলো-কালা খাল পাড় হয়ে ওনার ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনার জন্য স্কুলে আসতে পারবে না। তিনি সেখানে মোহাম্মদপুর লোনা নিবাসী শ্রীযুক্ত রজনী কান্ত দাশ নামক একজন শিক্ষক নিয়োগ করেন। তাঁর বেতন ছিলো তিন টাকা যা জমিদার মহোদয় নিজে প্রদান করিতেন।তখন স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিলো-৫/৬ জন। শিক্ষককে পন্ডিত বলে ডাকা হতো।স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা তাল পাতা অথবা কলাপাতায় অক্ষর লিখতেন।স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা বাঁশের ছাঁটাইয়ের ওপর বসিতেন।পন্ডিত মহাশয় যা বলতো ছাত্র-ছাত্রীরা তা সুর ধরে পড়তো। তৎকালে শিক্ষা উপকরণ বলতে কিছুই ছিল না।
১৯০০ সালে জমিদার মহোদয়ের ছেলে-মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়ে গেলে স্কুলের প্রতি মনোযোগ শিথিল হয়ে যায়।তাই তিনি বাড়ি হতে কিছু দূরে শ্রীযুক্ত বৈকুন্ঠ চন্দ্র রাজ মহোদয়ের বাড়িতে স্থানারিত করেন।সেখানে ১৫ হাত দৈর্ঘ্য এবং ৮ হাত প্রস্থ একটি দো- চালা নতুন ছনের ঘর তুলে স্কুলের কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়।পুরাতন শিক্ষক পরিবর্তন করে নতুন দুইজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।শিক্ষকগণ হলেন-১.শ্রীযুক্ত বৈকুন্ঠ চন্দ্র দে,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা,২.শ্রীযুক্ত রজনী কান্ত কর,নোয়াখালী।শিক্ষকদেরবেতন ছিলো তিন/চার টাকা। এখানে স্কুলটি আসার পর ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ: বৃদ্ধি পাইতে থাকলো।অভিভাবকগণ শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ও মনোযোগী হলেন।অভিভাবকগণ শিক্ষকদের কে নিয়মিত বেতন প্রদান করতেন। এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দেখা গেল কাদুটি গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা কালাখাল পাড় হয়ে নিয়মিত স্কুলে যাওয়া-আসা খুবই কষ্টকর।
১৯১০ সালে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা যাওয়া-আসার অচলাবস্থা নিরসন কল্পে এলাকার শিক্ষানুরাগী গণ কালখালের উপর বাঁশের সাঁকো তৈরী করে দিলেন। এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দেখা গেল অনেক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা বাঁশের সাঁকো পাড় হতে গিয়ে পানিতে পড়ে গিয়ে দূঘটনা শিকার হচ্ছে। তারপরও স্কুল যথারীতি চলতে থাকলো।
১৯১৬ সালে কাদুটি গ্রামের বড়বাড়ির শ্রীযুক্ত কাশীনাথ চন্দ্র দে নামক জন হিতৈষী ব্যক্তি এগিয়ে আসেন।তিনি বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে স্ব-অর্থায়নে নিজ বাড়ি সংলগ্ব কুঁড়ের পাড় নামক স্থানে একটি পাকা পুল তৈরী করেন। এ অঞ্চলের প্রথম পাকা পুল এটি ছিল।কালাখালের খর স্রোতপ্রবাহ,দূর্বল নির্মাণ কাজ ও প্রাকৃতিক নানাবিধ অসুবিধা হওয়ায় এক সময় তা ভেঙ্গে যায়। যার ভংগ্নাবশেষ আজ কালের স্বাক্ষী হিসেবে আছে।এতে যাতায়াতের সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। তারপরও স্কুল যথারীতি চলতে থাকলো।
১৯২০ সালে তৎকালীন হিন্দু প্রভাবশালী ব্যক্তি শ্রীযুক্ত ঈশান চন্দ্র বন্দ মহাশয় হঠাৎ ওনার বাড়ির নাট্যমঞ্চে স্কুল প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দেন।সাথে সাথে ওনার বাড়ির নাট্যমঞ্চে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়।এই স্কুল টি স্থাপনের কিছুদিন পর পাইকের করতলা গ্রামের শ্রীযুক্ত বৈকুন্ঠ চন্দ্র রাজ মহোদয়ের বাড়ির স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়।এই স্কুল টি পুরাতন শিক্ষক শ্রীযুক্ত বৈকুন্ঠ চন্দ্র দে,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা মহোদয় কে প্রথম শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।পরবর্তীতে আরো তিন জন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন-১.শ্রীযুক্ত জগবন্ধু কর,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা ২.শ্রীযুক্ত ক্ষিরোদা মোহন মিত্র,গ্রাম-কাদুটি,৩.জনাব মো: আরব আলী,গ্রাম-হাড়ি খোলা।
১৯২৫ সালে বৃটিশ সরকার শিক্ষাক্রম প্রনয়ন করেন।সেই শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠশালা নাম পরিবর্তন করে প্রাইমারী স্কুল অথবা প্রাথমিক বিদ্যালয় নাম ধারণ করে।শিক্ষকগণের পদবী পরিবর্তন হযে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক করা হলো।সেই মোতাবেক শ্রীযুক্ত বৈকুন্ঠ চন্দ্র দে,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা মহোদয় কে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।এছাড়া বাকী তিন জনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।তখন শ্রেণি বিভাজন হয়ে প্রথম শ্রেণি,দ্বিতীয় শ্রেণি,তৃতীয় শ্রেণি,চতুর্থ শ্রেণি হিসেবে শিক্ষাদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়।এর ফলে এলাকার অভিভাবকগণের মধ্যে ব্যাপক হারে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ও মনোযোগী হলেন। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ: বৃদ্ধি পাইতে থাকলো।শিক্ষকগণ ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট হতে মাসিক বেতন হিসেবে প্রথম শ্রেণি- এক আনা,দ্বিতীয় শ্রেণি-দুই আনা,তৃতীয় শ্রেণি- তিন আনা,চতুর্থ শ্রেণি- চার আনা আদায় করতেন।স্কুলটি সকাল ১০টায় কিংবা ১১টার সময়ে আরম্ভ হতো এবং সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলতো।
১৯২৯ সালে শ্রীযুক্ত ঈশান চন্দ্র বন্দ বাড়ির নাট্যমঞ্চে স্কুলটিতে ছাত্র-ছাত্রীর আধিক্যতা, অন্যদিকে ওনার মাঝ বাড়িতে অবস্থিত সহ নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় সেখানে স্কুলটি পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।তখন শ্রী হরিকুমার গোস্বামী এগিয়ে আসেন। ওনার অনুমতি ক্রমে বর্তমান স্থানের একটু দুরে বিদ্যালয়টি সাময়িক ভাবে পূণ: স্থাপনে করা হয়।এজায়গাটি ওনাদের অনাবাদী ভিটাবাড়ি ছিল।এখানে ছিল কাশবন ও বনজঙ্গল।মাঝে মাঝে দিনের বেলায় শিয়াল ডেকে ওঠত। সামান্য একটু জায়গা ফাঁকা ছিলো।সেখানে বিকাল হলে গ্রামের ছেলেরা খেলাধূলা করত। সেই জায়গায় তড়িৎগতিতে এলাকার অভিভাবক গণ ছন দিয়ে ১৫ হাত লম্বা এবং ৮হাত প্রস্থ একটি চৌচালা ঘর তৈরী করেন।এতে কোন বেড়া ছিল না।পুরাতন সকল শিক্ষক সবাই এখানে এসে নিয়মিত পাঠদান করতেন।এর মধ্যে স্কুলটিতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ: বৃদ্ধি পাইতে থাকলো।শিক্ষকগণ ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট হতে মাসিক বেতন হিসেবে প্রথম শ্রেণি- দুই আনা,দ্বিতীয় শ্রেণি-তিন আনা,তৃতীয় শ্রেণি- চার আনা,চতুর্থ শ্রেণি- পাঁচ আনা আদায় করতেন।স্কুলটি সকাল ১০টায় কিংবা ১১টার সময়ে আরম্ভ হতো এবং সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলতো।
১৯৩৯ সালে অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। তিনি দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বে-সরকারি ভাবে এক বিঘা জমির উপর প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষনা দেন।তখন গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে অনেক দেন-দরবার করা হয়।এ প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন নিয়ে দেশের অনেক স্থানে মনমালিন্যের সৃষ্টি হয়। অত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন এর বেলাও ব্যতিক্রম হয় নাই। কাদুটি গ্রামবাসী যখন নিজ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেন ঠিক তখনই উবরা পাইকের করতলা জমিদার পুত্র জনাব তোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী ঘোর বিরোধিতা করেন এবং নিজ বাড়িতে বিদ্যালয়টি স্থাপনের চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন।অপর দিকে পাশের লনাই গ্রামের জনাব মো: আকামত আলী মুন্সী ও জনাব মওলানা মো: আবদুল হক নামক দুইজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ওনাদের গ্রামে বিদ্যালয়টি স্থাপনের চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন।তখন সবাই স্কুল প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে এস ডি ও অর্থাৎ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক মহোদয়ের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন।এমতাবস্থায় ত্রিপুরা জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক ছিলেন ডি কে চৌধুরী।ওনার পুরো নাম দিলীপ কুমার চৌধুরী।তিনি ছিলেন কাদুটি গ্রামের ক্ষিরোদা মোহন মিত্রের বড় বোনের ছেলে। অফিসার হিসেবে তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি সরে-জমিনে তদন্তের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করবেন বলে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।পরবর্তীতে একদিন কাদুটি,লনাই ও উবরা পাইকের করতলা গ্রামের বিদ্যালয়টি স্থাপনের জায়গা গুলো পরিদর্শন করেন।পরিদর্শনের সময় নিন্মে বর্ণিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন-১.জনাব মো: সৈয়দ আলী,পিতা-মৃত হাজী মো: আজু গাজী,গ্রাম-কাদুটি ।২.জনাব মো: আকামত আলী,পিতা-মৃত মো: ভূঁঞা গাজী,গ্রাম-কাদুটি ।৩.জনাব হাজী মো: হাইদর আলী,পিতা-মৃত হাজী মো: সফর উদ্দীন ,গ্রাম-কাদুটি ।৪.জনাব অধর চন্দ্র নন্দী,পিতা- মৃত অনিল চন্দ্র নন্দী,গ্রাম-ইলাশপুর।৫.জনাব ঈশান চন্দ্র বন্দ,পিতা-রাম কুমার বন্দ,গ্রাম-কাদুটি।৬. জনাব মো: মালী মাউদ,পিতা-অজ্ঞাত,গ্রাম-কাদুটি(নূরু হাজী সাহেবের দাদা)৭.জনাব মো: আবদুল কাদের ,পিতা-মৃত হাজী মো: রহিম উদ্দীন,গ্রাম-লনাই।৮.জনাব মো: আকামত আলী মুন্সী,পিতা-অজ্ঞাত,গ্রাম-লনাই।৯.মওলানা মো: আবদুল হক,পিতা- মৃত মো: ছানা উল্লাহ ক্বারী,গ্রাম-লনাই।১০.জনাব হরি কুমার গোস্বামী,পিতা-মৃত রাধা গোবিন্দ গোস্বামী,গ্রাম-কাদুটি।১১.জনাব তোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী,পিতা-তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী,গ্রাম-উবরা পাইকের করতলা।এছাড়াও গ্রামের অনেক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।পরিদর্শন শেষে কাদুটি গ্রামের বর্তমান স্থানটি নির্ধারণ করেন এই জন্য যে, ভৌগলিক ভাবে কাদুটি গ্রামের রাস্তাঘাট ভালো ও বাজার আছে। তাছাড়া স্থানটি সুন্দর ও মনোরম। শান্ত পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হবে। কাদুটির স্থানটি লনাই ও উবরা পাইকের করতলা গ্রামের মধ্যবর্তী ও দুরত্ব খুব বেশী নয়।তারপর তিনি পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন।তখন হরি কুমার গোস্বামী মহোদয়ের পাশের জমির মালিক হলেন-১.জনাব মো: সৈয়দ আলী,পিতা-মৃত হাজী মো: আজু গাজী,গ্রাম-কাদুটি ।২.জনাব মো: আকামত আলী,পিতা-মৃত মো: ভূঁঞা গাজী,গ্রাম-কাদুটি দুজন কে এলাকাবাসী জমিদানের অনুরোধ করলে ওনারা বিনা শর্তে এক বিঘা জমি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য দান করার ঘোষনা দেন।তখন এলাকাবাসী ৪০ হাত লম্বা এবং ১০ হাত প্রস্থ বিশিষ্ট বাঁশের খুটি দ্বারা দো-চালা ছনের ঘর,তারার বেড়া দিয়ে স্কুল টি নির্মাণ করেন। বিদ্যালয়টি পেল স্থায়ী ঠিকানা।অপরদিকে যেখানে যেখানে স্কুলের আসবাব পত্র ছিলো সবগুলো আনায়ন করা হলো।এই স্কুল টি পুরাতন শিক্ষক শ্রীযুক্ত বৈকুন্ঠ চন্দ্র দে,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা মহোদয় কে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়।পরবর্তীতে আরো তিন জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন-১.শ্রীযুক্ত জগবন্ধু কর,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা ২.শ্রীযুক্ত ক্ষিরোদা মোহন মিত্র,গ্রাম-কাদুটি,৩.শ্রীযুক্ত তারক চন্দ্র মজুমদার,গ্রাম-কাদুটি। তখন বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিলো-১৫০/১৬০ জনের মত। শিক্ষকদের বেতন সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ হতে সর্বসাকুল্যে ৫০ টাকা প্রদান করা হতো।এ টাকা সকল শিক্ষকগণ সমান ভাগ করে নিতেন।অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীরা মাসিক হারে বেতন দিতে হতো।
১৯৪২ সালে বিদ্যালয়টি সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে চলতে থাকলে এর সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়।তখন তৎকালিন সরকার বিদ্যালয়টির জন্য দুই বান্ডেল ঢেউ টিন বরাদ্ধ প্রদান করেন এবংএলাকাবাসীর সহায়তায় আরোও তিন বান্ডেল ঢেউ টিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় করেন। এ কাজে সহায়তা করেন শ্রীযুক্ত সীতানাথ মজুমদার।ওনার বলিষ্ট নেতৃত্বে বিদ্যালয় ভবনটি পুনরায় নতুন করে মেরামত ও সংস্কার করা হয় এবং কিছু নতুন আসবাবপত্র ও তৈরী করা হয়।তখন প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা কলা পাতায় কিংবা হোগলা পাতার ছাটাইয়ে বসে পড়াশোনা করতো।অপরদিকে তৃতীয় শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা বেঞ্চে বসে পড়ার সুযোগ পেতো।
১৯৪৪ সালে শ্রীযুক্ত বৈকুন্ঠ চন্দ্র দে মহোদয়ের স্থলে মো: শামসুল হক নামক একজন মেট্টিক পাশ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হলে শ্রীযুক্ত বৈকুন্ঠ চন্দ্র দে মহোদয় সহকারি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করতে থাকলেন। অপরদিকে শ্রীযুক্ত জগবন্ধু কর মহোদয় শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধ্যকতা হেতু চাকুরী ছেড়ে অবসরে চলে যান।
১৯৪৭ সালে মো: শামসুল হক মহোদয় প্রধান শিক্ষক পদ হতে অব্যহতি নিলে মো:আমিনুল ইসলাম মিয়া নামক একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তখনই বিদ্যালয়টি চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়।
১৯৫২ সালে মো:আমিনুল ইসলাম মিয়া মহোদয় বদলি জনিত কারণে অন্যত্র চলিয়া গেলে তার স্থলে মো: আবদুল হক নামক একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৫৩ সালে মো: আবদুল হক মহোদয় বদলি জনিত কারণে অন্যত্র চলিয়া গেলে তার স্থলে শ্রীযুক্ত প্রসন্ন কুমার দে নামক একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৫৪ সালে শ্রীযুক্ত প্রসন্ন কুমার দে মহোদয় মৃত্যু জনিত কারণে তার স্থলে জনাব মো: আবদুল মজিদ,গ্রাম-কালেমসার নামক একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।ঠিক তখনই সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোকেcompulsory education এর আওতায় আনেন এবং প্রতি ইউনিয়নে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয় compulsory education এর আনায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করলে এ বিদ্যালয়টি এক নম্বরে চলে আসে। তখন শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচজনে উন্নীত করা হয় এবং বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিলো ২৫০/৩০০ জনের মত।
১৯৫৫ সালে মো: আবদুল মজিদ,গ্রাম-কালেমসার মহোদয় বদলি জনিত কারণে অন্যত্র চলিয়া গেলে তার স্থলে মো: আজগর আহাম্মদ, গ্রাম-টামটা নামক একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৫৮ সালে তৎকালীন সরকার বিদ্যালয়টিকে আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘোষনা করেন। মো: আজগর আহাম্মদ ,গ্রাম-টামটা মহোদয় বদলি জনিত কারণে মোহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলিয়া গেলে তার স্থলে মো: আবদুল আলী, গ্রাম-পশ্চিম ইলাশপুর নামক একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।জনাব মো: আজগর আহাম্মদ কিছুদিন মোহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী করার পর যাতায়াতের অসুবিধা হেতু পুনরায় অত্র বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করতে থাকলেন।
১৯৬২ সালে বিদ্যালয়টির ভালো ফলাফল,অধিক ছাত্র-ছাত্রীর পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত কল্পে,সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম অর্থাৎখেলাধুলা ও বিনোদনের নিমিত্তে বিদ্যালয়টিকে সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন পড়ে।তখন এই প্রতিষ্ঠানের আশে-পাশের জমির মালিকগণের নিকট জমি দানের আবেদন রাখলে নিচের ধণাঢ্য ব্যক্তিবর্গ স্বেচ্ছায় প্রতিষ্ঠানের নামে এক একর জমি দান করেন।জমিদাতা গণ হলেন-১.জনাব হরি কুমার গোস্বামী,পিতা-মৃত রাধা গোবিন্দ গোস্বামী,গ্রাম-কাদুটি।২.জনাব তারক চন্দ্র মজুমদার,পিতা-মৃত কালী কান্ত মজুমদার,গ্রাম-কাদুটি।৩. জনাব আলহাজ্ব মো: চেরাগ আলী,পিতা- মৃত আলহাজ্ব মো: সফর উদ্দীন,গ্রাম-কাদুটি।৪.জনাব মো: চাঁন্দ মিয়া,পিতা- মৃত মো: জিন্নত আলী,গ্রাম-কাদুটি।৫.জনাব মো: সোনা মিয়া,পিতা- মৃত মো: আবদুল হামিদ,গ্রাম-কাদুটি।
১৯৬৩ সালে সরকার বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন কল্পে যথেষ্ট পরিমান শিক্ষা উপকরণ প্রদান করেন।তখনই বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষসহ আসবাবপত্র দ্বারা স্বয়ংসম্পূর্ণতা পায়।
১৯৬৪ সালে অত্র বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নিমিত্তে সরকার ১৪,০০০/-(চৌদ্দ হাজার) টাকার অনুদান বরাদ্ধ প্রদান করেন। উক্ত বরাদ্ধপত্রে শর্ত ছিল এই রকম সরকার ১০,০০০/-(দশ হাজার) টাকা দিবে আর বাকী ৪,০০০/-(চার হাজার)টাকা স্থানীয় অনুদান হিসেবে প্রদান করতে হবে।তখন এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ নিয়ে একটি সাধারণ সভার আয়োজন করেন।উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন মৌলিক গণতন্ত্রের সদস্য আলহাজ্ব মো: আবদুল কাদের মহোদয়। ওনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে নিচের ধণাঢ্য ব্যক্তিবর্গ স্বেচ্ছায় প্রতিষ্ঠানের নামে ৪,০০০/-(চার হাজার)টাকা দান করেন।তাঁরা হলেন-১. মো: আবদুল কাদের পিতা- মৃত আলহাজ্ব মো: হাইদর আলী,গ্রাম-কাদুটি,অনুদান-১০০০/- (এক হাজার)টাকা।২. মো: আজগর আহাম্মদ পিতা- মৃত আলহাজ্ব মো:ইমান উদ্দিন,গ্রাম-টামটা,অনুদান-১০০০/- (এক হাজার)টাকা।৩. আলহাজ্ব মো: আবদুল হামিদ প্রধান পিতা- মৃত আলহাজ্ব মো: আক্রম আলী,গ্রাম-কাদুটি,অনুদান-১০০০/- (এক হাজার)টাকা। ৪.মো: আবদুল হাই চৌধুরী পিতা- মৃত মো: আফাজ উদ্দিন চৌধুরী,গ্রাম-উবরা পাইকের করতলা,অনুদান-১০০০/- (এক হাজার)টাকা।
১৯৬৫ সালের মে/জুন মাসের শেষ দিকে উক্ত টাকা দিয়ে ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৬ ফুট প্রস্থের একটি পাকা দালান ঘর তৈরী করেন।এটি ছিলো গ্রামের দ্বিতীয় পাকা দালান ঘর। দালান তৈরীর পাশাপাশি ভবনের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে শিক্ষার মনোরম পরিবেশ তৈরী করা হয়এবং বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ৫০০/৭০০ জনের মত দাঁড়ায়।শিক্ষকের পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১০ জন করা হয়।পুরাতন টিন শেড ঘর হতে সকল আসবাবপত্র,শিক্ষা উপকরণ পাকা দালানে স্থানান্তরিত করলে টিন শেড ঘরটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
উচ্চ বিদ্যালয় গঠনের সূচনা:এলাকাবাসী তখন পরিত্যক্ত টিন শেডটিতে একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের জোড় প্রস্তাব করেন। কারণ ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে দোল্লাই নবাবপুর আহসান উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়,৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ঝলম উচ্চ বিদ্যালয়,৮ কিলোমিটার উত্তরে বাড়েরা উচ্চ বিদ্যালয়,৬ কিলোমিটার পূর্বে রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। তখন যানবাহন ব্যবস্থা উন্নত ছিলো না। প্রতিদিন পায়ে হেঁটে যেয়ে পড়াশোনা করা কষ্টকর ছিলো।তখন জরুরী ভিত্তিতে উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের নিমিত্তে জনাব আলহাজ্ব মো: আবদুল কাদের ও ডা: মো: আবুল কাশেম মহোদয়ের যৌথ আহ্বানে এলাকায় একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বিভিন্ন গ্রামের সর্বমোট ৫৯ (উনষাট) জন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন-১.জনাব আলহাজ্ব মো: আবদুল কাদের ,গ্রাম-কাদুটি ২.জনাব ডা: মো: আবুল কাশেম,গ্রাম- পশ্চিম ইলাশপুর (বর্তমানে কাদুটি) ৩.জনাব হরি কুমার গোস্বামী,গ্রাম-কাদুটি ৪.জনাব তারক চন্দ্র মজুমদার,গ্রাম-কাদুটি ৫. জনাব আলহাজ্ব মো: চেরাগ আলী,গ্রাম-কাদুটি ৬.জনাব মো: চাঁন্দ মিয়া,গ্রাম-কাদুটি ৭.জনাব মো: সৈয়দ আলী,গ্রাম-কাদুটি,৮.জনাব মো: আজগর আহাম্মদ,গ্রাম-টামটা,৯.জনাব আলহাজ্ব মো: আবদুল হামিদ প্রধান,গ্রাম-কাদুটি,১০.জনাব মো: আবদুল হাই চৌধুরী,গ্রাম-উবরা পাইকের করতলা,১১. জনাব হরি কুমার বন্দ,গ্রাম-কাদুটি১২. জনাব মো: সুজাত আলী মেম্বার,গ্রাম-কাদুটি ১৩.জনাব মো: জাকির হোসেন,গ্রাম-কাদুটি ১৪.জনাব ধীনেশ চন্দ্র দে,গ্রাম-কাদুটি ১৫.জনাব মাখন চন্দ্র ভাওয়াল,গ্রাম-কাদুটি,১৬.জনাব মো: আজগর আলী ভূঁঞা,গ্রাম-কাদুটি,১৭.জনাব মনীন্দ্র চন্দ্র মজুমদার,গ্রাম-কাদুটি,
১৮.জনাব হরি নারায়ন গোস্বামী,গ্রাম-কাদুটি ১৯.জনাব মো: আবদুস সামাদ ভূঁঞা,গ্রাম-কাদুটি ২০.জনাব মো: ডেঙ্গু গাজী,গ্রাম-কাদুটি ২১.জনাব সুভাষ চন্দ্র মজুমদার,গ্রাম-কাদুটি ২২. জনাব মো: আবদুল কাদির মাস্টার,গ্রাম-কাদুটি ২২.জনাব মো: ওয়ালী উল্যাহ মাস্টারগশাম-কাদুটি ২৩.জনাব মো: আইউব আলী প্রিন্সিপাল,গ্রাম-টামটা,২৪,জনাব মো: নূরূল ইসলাম,গ্রাম-টামটা,২৫. জনাব মো:আবুল কাশেম চৌধুরী,গ্রাম-পাইকের করতলা, ২৬.জনাব হরি কুমার নিয়োগী,গ্রাম-পাইকের করতলা,২৭.জনাব লাল মোহন রাজ,গ্রাম-পাইকের করতলা,২৮.জনাব রাজ কুমার রাজ,গ্রাম-পাইকের করতলা,২৯.জনাব মো: আবদুল মতিন মাস্টার,গ্রাম-পাইকের করতলা,৩০.বাবু বনমালী দাস,গ্রাম-পশ্চিম ইলাশপুর ৩১. বাবু সনাতন চন্দ্র দাস,গ্রাম-পশ্চিম ইলাশপুর,৩২.জনাব মো: আবদুল আলী মাস্টার,গ্রাম-পশ্চিম ইলাশপুর৩৩. বাবু চন্দ্র কান্ত ভক্ত,গ্রাম-পশ্চিম ইলাশপুর,৩৪.বাবু বিপিন চন্দ্র দাস,গ্রাম-পশ্চিম ইলাশপুর,৩৫. বাবু দূর্গাচরণ পাল,গ্রাম-পশ্চিম ইলাশপুর৩৬.জনাব মো: আবদুল খালেক,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা,৩৭.জনাব মো: আবদুল গণি মেম্বার,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা৩৮.জনাব মো: মোহর আলী মেম্বার,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা৩৯.বাবু দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা৪০.বাবু চন্দ্র মোহন ঘোষ,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা ৪১.বাবু সুধীর চন্দ্র মজুমদার,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা ৪২.বাবু অনাথ বন্ধু বর্দ্ধন,গ্রাম-মোহাম্মদপুর লোনা ৪৩. জনাব মো: আবদুল হক,গ্রাম-ওড্ডা ৪৪.জনাব মো: আবদুল বাতেন মাস্টার,গ্রাম-ওড্ডা,৪৫,জনাব মো: মিছির আলী প্রধান,গ্রাম-ওড্ডা ৪৬.বাবু নিতাই চন্দ্র সরকার,গ্রাম-কাশারীখোলা ৪৭.জনাব মো: আবদুল মজিদ মাস্টার গ্রাম-কালেমসার ৪৮.জনাব মো: আলী নেওয়াজ মাস্টার গ্রাম-ধেরেরা ৪৯.জনাব ক্বারী মো: আবদুল রহিম গ্রাম-বীরখাল ৫০.জনাব মো: আবদুল বারী মাস্টার ,গ্রাম-লনাই ৫১. বাবু অনুকূল চন্দ্র দেবনাথ,গ্রাম- বামন্ডা,৫২. জনাব মো: কলিম উল্লাহ মাস্টার,গ্রাম-গজারিয়া ৫৩.জনাব মো: আবদুল খালেক,গ্রাম-গজারিয়া ৫৪.জনাব মো: সায়েদুর রহমান ,গ্রাম- ভারারুয়া,৫৫. জনাব মো:নূরুল ইসলাম,গ্রাম-বশিকপুর,৫৬.জনাব মো: আবদুর রব গ্রাম- সুরিখোলা,৫৭.বাবু কৈলাশ চন্দ্র সিংহ,গ্রাম-কংগাই ৫৮.জনাব মো: আবদুল মমিন মোল্লা গ্রাম-চিতড্ডা ৫৯. জনাব আলহাজ্ব মো: ছেরাজুল হক,গ্রাম-ফতেহপুর।
উক্ত সভায় সর্বসম্মতি ক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে,সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে জনাব ডা: মো: আবুল কাশেম মহোদয় কে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবে এবংতাকে স্কুলের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
১৯৬৬ সালের জানুয়ারী মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন টিন শেডটিতে উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম আরম্ভ হয়। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডা: মো: আবুল কাশেম মহোদয় প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। সেই সাথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারি শিক্ষক ও নিয়োগ প্রদান করা হয়।
১৯৬৭ সালে সপ্তম শ্রেণি খোলা হয়। তখন ডা: মো: আবুল কাশেম মহোদয় স্থলে ভারারুয়া নিবাসী জনাব মো: সায়েদুর রহমান মহোদয়কে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।তখন ডা: মো: আবুল কাশেম মহোদয় করনিক কাম সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
১৯৬৮ সালে অষ্টম শ্রেণি খোলা হয়। তখন ভারারুয়া নিবাসী জনাব মো: সায়েদুর রহমান মহোদয় অন্যত্র বদলী হয়ে গেলে তার স্থলে চিতড্ডা নিবাসী মো: আবদুল মমিন মোল্লা মহোদয়কে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তখন এলকাবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়।
১৯৬৯ সালে চিতড্ডা নিবাসী জনাব মো: আবদুল মমিন মোল্লা মহোদয় অন্যত্র বদলী হয়ে গেলে তার স্থলে টামটা নিবাসী মো: আইউব আলী মহোদয়কে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।তিনি ছিলেন সদ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি হতে অর্থনীতিতে পাশ করা বেকার যুবক।তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি নিন্ম মাধ্যমিক হতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়।এমতাবস্থায় নগদ অর্থসহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই একর জমির প্রয়োজন। তিনি তখন এলাকার ধণাঢ্য ব্যক্তিবর্গ ও ভূস্বামীদেরকে নিয়ে এক সাধারণ সভা আহ্বান করেন।সভায় বিদ্যালয়ের জন্য সর্বপ্রথম জনাব বনমালী চন্দ্র দাস নগদ অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন এবং সেই মোতাবেক নগদ অর্থ ১০,০০০/- (দশ হাজার)টাকা প্রদান করেন। সভায় আবারো বিদ্যালয়ের জন্য জমিদানে যারা এগিয়ে আসেন ওনারা হলেন-১.জনাব হরি কুমার গোস্বামী,পিতা-মৃত রাধা গোবিন্দ গোস্বামী,গ্রাম-কাদুটি।২.জনাব তারক চন্দ্র মজুমদার,পিতা-মৃত কালী কান্ত মজুমদার,গ্রাম-কাদুটি।৩.জনাব মো: সৈয়দ আলী,পিতা- মৃত আলহাজ্ব মো: আজু গাজী, গ্রাম-কাদুটি ৪.জনাব মো: আজগর আলী ভূঁঞা,পিতা-মৃত মো: আকামত আলী ভূঁঞা,গ্রাম-কাদুটি।
১৯৭০ সালে টামটা নিবাসী জনাব মো: আইউব আলী মহোদয় সদ্য প্রতিষ্ঠিত দোল্লাই নবাবপুর কলেজে প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদান করলে তার স্থলে সুরিখোলা নিবাসী মো: আবদুর রব মহোদয়কে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।তিনি রাগদৌল এম আই উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে ১ম ব্যাচ এস এস সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করানো হলে বেশ সফলতা বয়ে আনেন।
১৯৭২ সালে সুরিখোলা নিবাসী মো: আবদুর রব মহোদয় অন্যত্র বদলী হয়ে গেলে তার স্থলে বশিকপুর নিবাসী মো: নূরুল ইসলাম মহোদয়কে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।তিনি গোমতা ইসহাকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে ২য় ব্যাচ এস এস সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করানো হলে ফলাফল সন্তোষজনক হয়।
১৯৭৩ সালে বশিকপুর নিবাসী মো: নূরুল ইসলাম মহোদয় অন্যত্র বদলী হয়ে গেলে তার স্থলে কাদুটি নিবাসী মো: জাকির হোসেন মহোদয়কে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।দায়িত্ব পাওয়ার পরদিন হতে তিনি বিদ্যালয়টিকে ঢেলে সাজানোর কাজে লেগে পড়েন। অপরদিকে ০১ জুলাই ১৯৭৩খ্রি: তারিখে সরকারের এক ঘোষনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয়করণ করা হয়।
১৯৭৪ সালে কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্যএশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন বরাদ্ধ প্রদান করা হয়। যা বর্তমানে প্রশাসনিক ভবন।
১৯৭৬-১৯৭৭ সালে কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ফান্ড সংকটে পড়লে এলাকার ধণাঢ্য ব্যক্তি জনাব মো: আবিদ আলী পিতা-মৃত মো: চেরাগ আলী,গ্রাম-কাদুটি ওনার জমি বিক্রি করে ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা স্কুলকে দান করেন।
১৯৮৫ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবংমাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা নামে দুইটি আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা হলেও অত্র বিদ্যালয় দুইটিতে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায় নি।
১৯৮৬ সালে কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য মাধ্যমিক বিজ্ঞান শিক্ষা প্রকল্পের অধীনে একটি বিজ্ঞান ভবন ও প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি প্রদান করা হয় যা এল জি ই ডি বাস্তবায়ন করেন।
১৯৮৮ সালে কাদুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি পাকা ভবন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্ধ প্রদান করা হয় যা এল জি ই ডি বাস্তবায়ন করেন।
১৯৯৪ সালে কাদুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি আধা পাকা টিন শেড ভবন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্ধ প্রদান করা হয় যা এল জি ই ডি বাস্তবায়ন করেন।
১৯৯৫ সালে কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য একটি পাকা ভবন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্ধ প্রদান করা হয় যা এল জি ই ডি বাস্তবায়ন করেন।
১৯৯৬ সালে কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়টি উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় ও শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের মর্যাদা লাভ করার গৌরব অর্জন করেন।
১৯৯৯ সালে কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরী ভবন ওয়াজ আর্নার কল্যাণ তহবিল হতে বরাদ্ধ প্রদান করা হয় যা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বাস্তবায়ন করেন।
২০০১ সালে কাদুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা ভবন এডিবি সাহায্য পুষ্ট প্রকল্প হতে বরাদ্ধ প্রদান করা হয় যা এল জি ই ডি বাস্তবায়ন করেন।
২০০২ সালে কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য বর্তমান পাকা ভবনের উপর দ্বিতল করার জন্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্ধ প্রদান করা হয় যা এল জি ই ডি বাস্তবায়ন করেন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
১.তথ্য সরবরাহ কারী সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ।২.সকল অফিসার বৃন্দ,বুদ্ধিদাতা,পরামর্শদাতাগণ।
৩.সকল অর্থ দাতা,জমিদাতা,ঐ সময়ে যে যা দিয়ে ছিলেন তাঁরা সকলে।
পুনশ্চ: আমার বাবা মো: জাকির হোসেন কে জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময় গুলো স্কুলে কাটাতে হয়েছে।মানুষের মৌলিক অধিকার গুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে শিক্ষা।শিক্ষা মানুষকে উন্নত জীবন দেবে,দারিদ্রের কশাঘাত থেকে মুক্তি দেবে সেই চিন্তাই ছিল প্রতিনিয়ত তাঁর মনে। যে কারণে তিনি নিজের জীবনের সব সুখ আরাম আয়েশ স্কুলেই কাটিয়েছেন।স্কুল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আমার বাবার নিজ হাতে লেখা। এই লেখাটি প্রকাশিত হবে,আপনাদের হাতে তুলে দিতে পারবো সে আশা আমার একদমই ছিলো না।১৯৭৩-২০০৭ সাল পর্যন্ত বাবা এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।সময় করে কোন ফাঁকে তা লিখেছেন আমি জানতাম না।মৃত্যুর আগ মুহুর্তে এই লেখার কথা আমাকে জানালেন এবং তা কোথায় আছে তিনি বলতে পারেন নি অর্থাৎ ভুলে গেছেন।অবশেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন কাগজের সাথে তা ভাগ্যক্রমে পেয়ে যাই। তিনি যে ভাবে লিখেছেন আমাকে খুব বেশি সম্পাদনা করতে হয় নি। তবে কিছু শব্দ ও ভাষার সাবলীলতা রক্ষার জন্য সামান্য কিছু সম্পাদনা করতে হয়েছে।কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চাশ বৎসর পূর্তিতে অর্থাৎ সূবর্ণ জয়ন্তীর স্মারক গ্রন্থে এ লেখাটি প্রকাশিত হবে আবেগে আপ্লুত ও আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা প্রকাশিত হয়নি। সে জন্য সূবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপন কমিটির নিকট চিরকৃতজ্ঞ।

——জেড এ আক্তারুজ্জামান,১৪ অক্টোবর-২০২০,সকাল-৮:০০টা।

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker