জাতীয়

ইয়াবা পাচারের নতুন পথ সিলেট সীমান্ত

ইয়াবা পাচারের নতুন পথ সিলেট সীমান্ত

 

– জকিগঞ্জ ও বাল্লা সীমান্তের ওপারে ইয়াবা তৈরির ছোট ছোট কারখানা

– বাংলাদেশে বছরে শুধু ইয়াবা বড়িই বিক্রি হয় ৪০ কোটির বেশি

– বিক্রি হওয়া এই ইয়াবার বাজারমূল্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা

– গত বছরের ৪ মে থেকে অভিযানে এ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে ৪২৬ জন নিহত

 

নেশার বড়ি ইয়াবা পাচারের নতুন পথ হয়ে উঠেছে সিলেট সীমান্ত। ভারতের মিজোরাম রাজ্য থেকে আসাম ও মেঘালয় হয়ে সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায়। এ ছাড়া জেলার জকিগঞ্জ ও বাল্লা সীমান্তের ওপারে (ভারতের অংশে) গড়ে উঠেছে ইয়াবা তৈরির ছোট ছোট কারখানা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দুই দেশের সীমান্তে আগে যারা হেরোইন ও ফেনসিডিল আনা-নেওয়া করত, বেশি লাভের আশায় তারা এখন ইয়াবার কারবার করছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় কিছু রাজনীতিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যেরও যোগসাজশ রয়েছে।

 

এ বিষয়ে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, ইয়াবা পাচারের জন্য ব্যবসায়ীরা এখন সিলেট সীমান্ত ব্যবহার করছে। সিলেটে ইয়াবাসহ ধরা পড়া লোকজন এসব তথ্য বিজিবিকে জানিয়েছে।

 

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৪ কিলোমিটার। জকিগঞ্জ সীমান্তের উল্টো দিকে ভারতের করিমগঞ্জ ও শিলচর এলাকা। দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে একটি ছোট নদী আছে। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ওপার থেকে পলিথিন ব্যাগে ইয়াবা ভরে রশির সাহায্যে নদীতে ফেলে দেয়। এপার থেকে কারবারিরা সেটা তুলে নেয়। এভাবেই চলে ইয়াবা পাচার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ভারতের করিমগঞ্জের আবদুল্লাহপুরে ইয়াবার কারখানা রয়েছে।

 

জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. আবদুন নাসের প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ইয়াবাসংক্রান্ত ৫৫টি মামলা হয়েছে থানায়।

 

পুলিশ সূত্র জানায়, জকিগঞ্জ পৌর যুবলীগের সদস্য শাহরিয়ার রহমানকে ৫০০টি ইয়াবাসহ গত ২৬ এপ্রিল সিলেট নগরের দরগাহ গেট এলাকার একটি হোটেল থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তিনি এখন কারাগারে আছেন। তৃণমূলের কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। তাঁদের মধ্যে উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহীন আহমদ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের ঘটনায় পৃথক মামলা রয়েছে। তাঁরা ইয়াবা মামলায় গ্রেপ্তারের পর এখন জামিনে রয়েছেন।

 

বিজিবির একজন কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ১১ নভেম্বর জকিগঞ্জের মানিকপুরের সেনাপতির চক থেকে বিজিবি ৬১ হাজার ৪০০ ইয়াবা বড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। এর দুই সপ্তাহ আগে ৩ হাজার ৯০০ ইয়াবা বড়িসহ গ্রেপ্তার করা হয় একজনকে।

 

জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) পরিচালক লে. কর্নেল সাঈদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট সীমান্তে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আবার তৎপর হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন।

 

গত ১৫ জুন ঢাকার পিলখানায় বিজিবির সঙ্গে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর বিএসএফের মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্র সাংবাদিকদের বলেন, মিজোরাম সীমান্তে ইয়াবাসহ ভারতীয় নারী ও পুরুষকে তাঁরা গ্রেপ্তার করেছেন। তারা বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের চেষ্টা করছিল।

 

র‍্যাব-৯-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান জানান, গত বছরের ২১ নভেম্বর সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার এলাকায় র‍্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবদুস শহীদ (৪২) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন।

 

পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯৭ সালে দেশে প্রথম ইয়াবা নিয়ে আসে কক্সবাজারের মাদক ব্যবসায়ীরা। এরপর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইয়াবা পাচারের একমাত্র পথ ছিল কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সমুদ্র এলাকা। তবে বেশির ভাগ ইয়াবা খালাস হতো কক্সবাজারের টেকনাফে। সম্প্রতি কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ায় সেখানে ইয়াবা খালাস কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বিকল্প পথ দিয়ে ইয়াবা পাচারের চেষ্টা করছে। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে সিলেট সীমান্ত।

 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ইয়াবা কারবারিদের সিলেট সীমান্ত ব্যবহারের খবর

ভারতের কাছেও রয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও সিলেট সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচারের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে।

 

জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউএনওডিসির মতে, বাংলাদেশে উদ্ধার হওয়া মাদকের পরিসংখ্যান অনুসারে, বছরে শুধু ইয়াবা বড়িই বিক্রি হয় ৪০ কোটির বেশি, যার বাজারমূল্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা (প্রতিটি দেড় শ টাকা হিসাবে)। সরকারিভাবেই বলা হয়, দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৬০-৭০ লাখ।

 

দেশজুড়ে ইয়াবার ভয়াবহতা ছড়ানোর

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker