জাতীয়

আসুন জেনে নেই পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার স্যারের সংক্ষিপ্ত জীবনী।

আসুন জেনে নেই পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার স্যারের সংক্ষিপ্ত জীবনী।

 

ফরিদপুরের মেয়ে শামসুন্নাহার চার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা সামছুল হক ওরফে ভোলা মাস্টার ও মা আমিনা বেগম। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের ইসমাইল মুন্সীর ডাঙ্গীতে জন্মগ্রহণ করেন।

 

তারা ২ বোন ও ২ ভাই। সবার বড় তিনি। মা-বাবার স্বপ্নও তাকে নিয়ে ছিল আকাশ ছোঁয়া। মেজো ভাই ডাক্তার। সেজো ভাই হাইকোর্টের আইনজীবী।

 

সবার ছোট বোন স্কুলের শিক্ষিকা। দুই সন্তানের জননী এ সফল নারী।

 

১৯৯১ সালে ভর্তি হন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে।

অনার্স করার সময়ই বিএনসিসি-তে নাম লেখান। তখন সেরা ১০ ক্যাডেটের একজন হিসেবে রাইডার ফ্লাইংয়ে সুযোগ পেয়ে যান। একজন পাইলটের সঙ্গে ওড়ার সুযোগ ছিল সেটি। বিএনসিসি-তে থাকার সময় প্যারেড করেছেন, অস্ত্র ধরেছেন। তাদের পোশাক, নিয়মশৃঙ্খলা দেখে তার মনে হলো- এমন কিছু হবো, পুলিশ হবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে বিসিএস দিলেন, মেধার জোরে উত্তীর্ণ হলেন। বিসিএস ক্যাডারে তার প্রথম পছন্দই ছিল পুলিশ।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে বিএসএস ও ১৯৯৮ সালে এমএসএস ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০১ সালে বিসিএস পাস করে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন। মানিকগঞ্জ হচ্ছে শামসুন্নাহারের প্রথম কর্মস্থল। তিনি মানিকগঞ্জ থেকে পরবর্তীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

 

শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার পরিচয় দিয়েছেন শামসুন্নাহার। ২০০৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ২০তম বিসিএস-এর মাধ্যমে শামসুন্নাহার পুলিশে যোগ দেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস ও এমফিল পাশ করে স্কলারশিপ পায় যুক্তরাষ্ট্রের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখান থেকে তিনি এমবিএ ডিগ্রিও অর্জন করেন। বিদেশে চাকরির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এক নারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা শামসুন্নাহার। ২০০৯-২০১০ সালে জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে পূর্ব তিমুর জাতীয় পুলিশের মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মকা-ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শাখা অফিস ইতালীতে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনে সাফল্যের পরিচয় দেন।তিনি জাতিসংঘে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ সাতবার জাতিসংঘ শান্তি পদক লাভ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২ বার আইজি ব্যাজপ্রাপ্ত হন। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এই পদকে ভূষিত করা হয়।

 

ফরিদপুরের কৃতি সন্তান শামসুন্নাহার ২০১৬ সালে দেশের প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে জাতীয় পুলিশ প্যারেডে নেতৃত্বে দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসেন।

 

তিনি চাঁদপুর জেলাকে মাদক, সন্ত্রাস, বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতনসহ সমাজিক অপরাধমুক্তকরণে অনেক অবদান রেখেছেন

 

মাদক ব্যবাসায়ীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তাদের পরিবারকে সতর্ক করার পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছেন।

 

তিনি সুশীল সমাজের সহযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে জেলার জনবহুল এলাকা, হাট বাজারগুলোতে মাদকবিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

 

পাশাপশি তিনি ‘মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবনকারীদের এ পথ থেকে সরে না আসলে কঠোর সাঁজার আওতায় আনা হবে’ বলে হুশিয়ার করে দিচ্ছেন।

 

পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার নির্যাতিত নারী ও শিশুদের কথা চিন্তা করে ২০১৫ সালে ১৫ অক্টোবর নারী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ সেল গঠন করেন। যেখানে প্রতিদিন নির্যাতিত নারী ও শিশুরা সেবা পেয়ে আসছে। এতে করে পুলিশ সুপারের প্রতি নারীদের আস্থা অনেকাংশে বেড়ে গেছে।

 

পেশাগত ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।এ দেশগুলো হচ্ছে : যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালী, ভ্যাটিকান সিটি, অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব তিমুর, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, দুবাই ও কাতার।ব্যক্তিগত জীবনে শামসুন্নাহার বিবাহিত। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী। তাঁর অবসর বিনোদন হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানো, গান গাওয়া ও গান শোনা। এছাড়া তিনি বিটিভির তালিকাভুক্ত একজন শিল্পী।বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২ জন নারী পুলিশ সুপার রয়েছেন তার মধ্যে বর্তমান গাজীপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার একজন।

 

 

Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker