শিক্ষাঙ্গন

মেয়ের অ্যাসাইনমেন্টের খরচ যোগাতে পরনের কাপড় বেচলেন মা!

মেয়ের অ্যাসাইনমেন্টের খরচ যোগাতে পরনের কাপড় বেচলেন মা!

করোনাকালে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে বছর শেষে সকল শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই বা গ্রেট নির্ণয় (অতি উত্তম, উত্তম ও মোটামুটি) করার লক্ষ্যে স্ব স্ব বিদ্যালয় থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। আর তা দিতে গিয়ে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৪ শ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা পরিশোধ করতে গিয়ে ওই বিদ্যালয়ের দিনমজুরের মেয়ের মা নিজের পরনের শাড়ি বিক্রি করে টাকা যোগাড় করে দিয়েছেন মেয়েকে। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সামালোচনা।

স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগী মেয়ের মা জানান, ওই বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে দিনমজুর মো. শহীদের মেয়ে রিতু আক্তার (রোল-২৬)। গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে যায় অ্যাসাইনমেন্ট আনতে। এ সময় তার সহপাঠীরা শ্রেণিশিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যাচ্ছে দেখে নিজেও এগিয়ে যায়। রিতু জানায়, তাকে অ্যাসাইনমেন্ট দিতে বললে শিক্ষক আনোয়ার হোসেন তিন পাতার প্রশ্ন, দুটি কলম ও এক পাতার সাজেশন দিয়ে মোট ৩৪০ টাকা দাবি করে। এ সময় বাবার দেওয়া এক শ টাকার একটি নোট দিলে তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে বলেন, ৩৪০ টাকাই আনতে হবে, অন্যথায় অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না বলে। অপমানিত মেয়ে কান্নাকাটি করে বাড়িতে গিয়ে ঘটনাটি মা বিলকিস আক্তারকে অবহিত করে।

ছাত্রীর মা বিলকিস আক্তার জানান, মেয়ে বাড়িতে এসে অনেক কান্নাকাটি করে। পরে তা সহ্য করতে পারেননি। ওই সময় টাকা হাতে না থাকায় তিনি তাঁর তিনটি পুরনো শাড়ি ৩০০ টাকায় বিক্রি করেন।

শাড়ি বিক্রি করে টাকা যোগাড়ের ঘটনাটি জানতে পারেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মো. শাহজাহান কবীর। শাহজাহান বলেন, তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি বিনামূল্যে একটি অ্যাসাইনমেন্ট পত্র সংগ্রহ করেন। সেই সাথে নিজের টাকা দিয়ে এ-ফোর কাগজ কিনে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিদ্যালয়ের পাশেই আঠারবাড়ি বাজারে একটি স্টেশনারি দোকান আছে। তিনি ওই দোকান থেকে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজ-কলম কিনতে বাধ্য করেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, অ্যাসাইনমেন্টে টাকা লাগে না। তারপর ফটোস্ট্যাট খরচের সর্বোচ্চ ১০ টাকা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কেন ওই শিক্ষক এত টাকা দাবি করেন বা নিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ তাঁর কানেও এসেছে। কিন্তু কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

অভিযুক্ত শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, স্কুল অভ্যন্তরীণ ঘটনা বাইরের কেউ হস্তক্ষেপ না করলেই চলে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে যে কেউ অ্যাসাইনমেন্ট ডাউনলোড করে নিতে পারে। অ্যাসাইনমেন্ট প্রদানের বিনিময়ে টাকা আদায় করা যাবে না।

Exit mobile version