চান্দিনালাইফস্টাইল

মুক্তির জন্য অব্যাহত লড়াই করে যাচ্ছেন ডা. ফজলুর রহমান

মুক্তির জন্য অব্যাহত লড়াই করে যাচ্ছেন ডা. ফজলুর রহমান

ডা. মো. ফজলুর রহমান। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। চান্দিনা, দাউদকান্দি, মতলব ও চাঁদপুরে অত্যন্ত পরিচিত নাম। ১৯৭১ সালে লড়াই করেছেন দেশ মাতৃকাকে শত্রুর হাত থেকে মুক্তির জন্য। দেশের মানুষকে হানাদারদের হাত থেকে মুক্তির জন্য। আর চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন মানুষের রোগ মুক্তির জন্য।

 

সর্বশেষ কর্মস্থল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। উপ-পরিচালক হিসেবে প্রায় ৩ বছর দায়িত্ব পালনের পর গত ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে অবসরে গিয়েছেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি ডেঙ্গু, মেলেরিয়া, কালাজ¦র, ফাইলেরিয়া, রেবিস ও সংক্রামক রোগের জাতীয় গাইডলাইন তৈরীতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। উক্ত গাইড লাইনের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা সহ এসব রোগের চিকিৎসা সেবার দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

 

এর আগে তিনি চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে সফলতার সাথে প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। চান্দিনা থেকে পদোন্নতি জনিত বদলির কারণে ঢাকায় অফিস শুরু করেন। অফিস শেষে সপ্তাহে ৪ দিন করে চান্দিনায় গিয়ে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস ও রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত চেম্বার করছেন অদ্যাবধি। প্রায় সব রোগে আক্রান্তদের সাধ্যানুযায়ী চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ২৬ এপ্রিল থেকে চান্দিনায় প্রতিদিন রোগী দেখছেন তিনি। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ থাকায় গত কিছুদিন ধরেই তিনি সরকারি হাসপাতাল রোডের মাতৃ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

 

উনার মতো অনেক অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং অন্যত্র চাকরিতে নিয়োজিত চিকিৎসকরা চান্দিনায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ব্যক্তিগতভাবে চেম্বার খুলে রোগী দেখে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে চান্দিনার বেশিরভাগ চিকিৎসকরাই প্রাইভেট প্র্যাক্টিস বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ নিজের স্বাস্থ্যের অযুহাত দেখিয়ে আবার কেউ কেউ গণপরিবহন বন্ধের অযুহাতে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে মানুষের ধারণা করোনা সংক্রমণের ভয়েই ডাক্তাররা রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন।

 

এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও রোগীদের সেবা দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. ফজলুর রহমান। ঢাকার আদাবরের বাসা থেকে চান্দিনায় আসা-যাওয়া করা কষ্টের। তাই চান্দিনার মোকামবাড়ি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন এবং নিয়মিত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

 

এদিকে ২০১৪ সালে নিজ বাড়ী চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার বাগান বাড়িতে ’ডক্টরস কর্নার ও বাগানবাড়ী ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে একটি চ্যারিটেবল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে প্রতি সপ্তাহে ২ দিন রোগীদের সেবা দেন তিনি। গরীব, দুস্থ ও অসহায়দের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন দীর্ঘ ৬ বছর ধরে। একই সাথে বিনামূল্যে ঔষধও সরবরাহ করে থাকেন। এই সংস্থাটি পরিচালনার জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন তার মামা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ম-পরিচালক ও মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মরহুম ডা. এম.এ মান্নান এফআরসিপি. সিপি পরিষদ ও এসইএল।

 

অপরদিকে মতলব উত্তর উপজেলাস্থিত নিজের পৈত্রিক ভিটে থেকে ৫ শতাংশ ভূমি বাংলাদেশ সরকারকে দান করেছেন ডা. মো. ফজলুর রহমান। সেখানে সরকারিভাবে গড়ে উঠেছে খাগুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক। ওই ক্লিনিকে সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

 

এ ব্যাপারে ডা. মো. ফজলুর রহমান বলেন- ’৭১ এর চেতনা হৃদয়ে ধারন করেই মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার দায়িত্ববোধ থেকে এই দুর্দিনে মানুষের পাশে আছি। তাদের সেবাকেই আমার প্রধান কর্ম বলে মনে করি। করোনা কালীন সময়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করাও ডাক্তারদের দায়িত্ব। সিজনাল ফ্লু সহ সব ধরনের রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমৃত্যু এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

Close