জাতীয়

আক্রান্ত ৪ হাজার ৭০৩ জনের মধ্যে ৩৪ শতাংশ করোনা জয় করে কাজে যোগ দিয়েছেন

পুলিশে সুস্থতার হার যে কারণে বেশি

পুলিশে সুস্থতার হার যে কারণে বেশি

আক্রান্ত ৪ হাজার ৭০৩ জনের মধ্যে ৩৪ শতাংশ করোনা জয় করে কাজে যোগ দিয়েছেন

 

পুলিশে গতকাল শনিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৭০৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৫ জন। তবে ১ হাজার ৬০৬ জন করোনাকে জয় করে কাজে যোগ দিয়েছেন এরই মধ্যে। তার মানে ৩৪.১৪ শতাংশ পুলিশ সদস্যই সুস্থ হয়ে গেছেন। এ ছাড়া আগের তুলনায় পুলিশে নতুনভাবে সংক্রমণের মাত্রাও কমে আসছে অনেক। সরকারি হিসাবে সারাদেশে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২১.০১ শতাংশ রোগী, আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ৬০৮ জন। সারাদেশের তুলনায় পুলিশে করোনা আক্রান্তদের সুস্থ হওয়ার হার কেন বেশি, এটা জানতে গিয়ে মিলিছে বেশ কিছু আশাজাগানিয়া তথ্য।

 

রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. খালেদ মোহাম্মদ ইকবাল গতকাল সমকালকে জানান, প্রথমে দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী যখন দু-একজন করে শনাক্ত হচ্ছিল, তখনই অনেকের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করেছে। আক্রান্ত শুরু হওয়ার পর প্রথম ১০ দিনে পুলিশে সংক্রমণ পাঁচশ’ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১৫০ জন রোগী রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তির পরপরই কভিড হাসপাতাল হিসেবে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়। একটা বিষয় শুরু থেকেই পুলিশে জোর দেওয়া হয়েছে, বেশি সংখ্যক সদস্যকে কভিড পরীক্ষার মধ্যে নিয়ে আসা। ফলে অনেক বেশি শনাক্ত হচ্ছে এবং তাদের আলাদা করা সম্ভব হয়েছে। তারা চিকিৎসার আওতায় আসছে।

 

চিকিৎসার কী পদ্ধতি প্রয়োগ করে রোগীদের সারিয়ে তোলা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে ডা. ইকবাল বলেন, “করোনার জন্য বিশ্বব্যাপী একক স্বীকৃত কোনো চিকিৎসা এবং ওষুধ আবিস্কৃত হয়নি। একেক দেশ একেক পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। বিশ্বের কোন দেশ কীভাবে করোনা রোগীদের সামলাচ্ছে, এটা অনেক চিকিৎসকই ইন্টারনেটে সর্বশেষ আপডেট ফলো করে থাকেন। চিকিৎসকদের মধ্যে গ্রুপ ডিসকাশনও হয়। দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা আমার চোখে পড়ে। সেখানে বলা হয়- ‘আইভার ম্যাকটিন’ জাতীয় ওষুধ প্রয়োগে করোনা রোগীর চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। এই ওষুধটি সাধারণত উকুননাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের আইভার ম্যাকটিন খাওয়ানোর ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালকের অনুমতি চাওয়া হয়। পরে অন্যান্য চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ওই ওষুধ দেওয়া হয়। যারা খুব পরিচিত রোগী, তাদের প্রথমে এই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। এরপর দেখা যায়, খুব দ্রুত তারা সুস্থ হয়ে উঠছেন। এমন ফল আসার পর অন্য রোগীদের এই ওষুধ দেওয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত পুলিশে করোনা আক্রান্ত প্রায় দেড় হাজার সদস্যকে আইভার ম্যাকটিন খাওয়ানো হয়েছে। এমনকি পুলিশে যাদের করোনা পরীক্ষা হয়নি তবে উপসর্গ রয়েছে, তাদেরও এটা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি যাদের জ্বর ছিল, তাদের এরিথ্রোমাইসিন খাওয়ানো হয়। পুলিশ সদস্যদের জন্য আমরা ২৫ হাজার আইভার ম্যাকটিন কিনে শুরুতেই মজুদ করে রেখেছিলাম।”

 

ডা. ইকবাল আরও বলেন, করোনা রোগীদের দ্রুত সুস্থ হওয়ার আরেকটি বড় ব্যাপার হলো, হাসপাতাল ব্যাবস্থাপনা ও রোগীকে কাউন্সেলিং করানো। রোগী যেন বুঝতে পারে চিকিৎসক তার সঙ্গে রয়েছে। পুলিশ হাসপাতালে সব রোগীকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, যাদের উপসর্গ কম তারা যেন বেশি উপসর্গের রোগীদের সঙ্গে না মেশেন। দিনে কমপক্ষে একবার চিকিৎসক রোগীর সামনে গিয়ে তার ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে আসবেন, এটা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ সময় ওয়ার্ডে যে চিকিৎসক বা কনসালট্যান্ট ঘুরবেন তিনি তার পরিচয় দিয়ে রোগীর সঙ্গে কথা বলবেন। যাতে রোগী বুঝতে পারে, কোন ডাক্তার তাকে দেখভাল করছেন। কারণ করোনা চিকিৎসায় ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় সবাই পিপিই পরিহিত থাকায় রোগী বুঝতে পারে না তিনি কার সঙ্গে কথা বলছেন।

 

ডা. ইকবাল আরও জানান, করোনা হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেওয়া জরুরি। তার পরামর্শ- কারও উপসর্গ দেখা দিলে বা না দিলে সব সময় গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস করা, রং চা খাওয়া, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া জরুরি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

 

পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘পুলিশ মহাপরিদর্শকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নির্দেশনায় করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা ও সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। এতে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুস্থতার হার একদিকে যেমন দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে নতুন করে সংক্রমণের সংখ্যা।

 

সংবাদসূত্রঃ সমকাল

রিপোর্ট করেছেনঃ বিশেষ প্রতিবেদক

সাহাদাত হোসেন পরশ

Exit mobile version