অপরাধ

চান্দিনায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে গলা কেটে হত্যা.

চান্দিনায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে গলা কেটে হত্যা.

কুমিল্লার চান্দিনায় সম্পত্তির লোভে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যার পর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ ও সন্দেহের তীর প্রতিপক্ষের দিকে ঘুরাতে নিজের গলায় ছুরিকাঘাত করেছেন এক পাষণ্ড বাবা।হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহের মধ্যেই হত্যার রহস্য উদঘাটন করে ঘটনার সাথে জড়িত দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

রহস্য উন্মোচন করে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তানভীর আহমেদ।

জানা গেছে, উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের সোলেমান ব্যাপারীর সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল তার আপন ভাতিজা শাহজালাল ও শাহ কামালের সাথে। ভাইদের ওই সম্পত্তি একাধিকবার দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন সোলেমান। এ নিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়।

এতে স্ত্রী সামান্য আহত হওয়ায় থানায় মামলা করেন সোলেমান। কিন্তু ওই মামলায় হত্যাচেষ্টার ধারা-৩২৬ যুক্ত না হওয়ার ভাতিজাদের ফাঁসাতে হত্যা মামলার পরিকল্পনা করেন তিনি।

সোলেমান বেপারীকে সহযোগিতা করেন তার আপন দুই ভাই মো: আব্দুল বাতেন ও লোকমান, সোলেমান ব্যাপারীর উকিলশ্বশুর একই গ্রামের আব্দুর রহমান, তার এক বন্ধু মো: খলিলসহ আরো দু’জন। ওই সাতজনের পরিকল্পনায় গত ১ অক্টোবর বিকেলে সোলেমান তার স্ত্রী ও বড় মেয়েকে হাসপাতাল থেকে শ্বশুরবাড়ি চান্দিনার রাণীচরা গ্রামে পৌঁছে দিয়ে আসেন। দুই ছেলে মাদরাসায় লেখাপড়ার সুবাদে ঢাকায় থাকায় সেই রাতে বাড়িতে ছিলেন শুধু সোলেমান ও তার ছোট মেয়ে সালমা আক্তার (১৪)।

১ অক্টোবর (শুক্রবার) সন্ধ্যার পর মেয়ে সালমাকে নিয়ে রাতের খাবার শেষে তাকে ঘরে রেখে বাহির হয়ে যান সোলেমান বেপারী। ওই রাতে উকিলশ্বশুর আব্দুর রহমানের ঘরে হত্যার পরিকল্পনা করে বাড়ি ফেরেন তিনি। গভীর রাতে মেয়েকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার পর লাশ পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেন।

ওই ঘটনায় পরদিন ভাতিজাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন সোলেমান বেপারী। মামলা করার পর থেকে এলাকাছাড়া হন আসামিরা।

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পুলিশ। পুলিশী তদন্তে সন্দেহের তীর যখন বাবা সোলেমান বেপারীর দিকে, বিষয়টি আঁচ করতে পারেন তিনি। তদন্ত কর্মকর্তা গত ৪ অক্টোবর (সোমবার) স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইসমাইল হোসেনকে ফোন করে মামলার বাদি সোলেমানকে নিয়ে সন্ধ্যায় থানায় আসার জন্য বললে ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকে নিখোঁজ হন সোলেমান। সোলেমানের পরিবারও থানায় ফোন করে নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করে। সোলেমান নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে।

পরদিন ৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ভোরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে গলায় ও দুই পাশে ছুরিকাঘাত অবস্থায় পাওয়া যায় সোলেমান বেপারীকে। আহত সোলেমান বেপারী পুলিশকে জানায়, তার দুই ভাতিজসহ অন্য আসামিরা তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।

কিন্তু ওই ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ আরো ঘনিভূত হয়। সিনিয়র অফিসারদের সাথে নিয়ে আরো গভীরভাবে তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে বুধবার (৬ অক্টোবর) আব্দুর রহমান ও খলিলকে আটক করে।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কিশোরী সালমা হত্যাকাণ্ড ও পুলিশের সন্দেহ এড়াতে সোলেমানের গলায় ছুরিকাঘাত করার বিষয়টি নিশ্চিত হন তারা। পরে রাতেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আটক আব্দুর রহমান ও খলিল মিয়া।

চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, সোলেমান বেপারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। তবে আমাদের পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।

মামলার বিষয়টি জানতে চাইলে ওসি আরো বলেন, যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা গ্রহণ করা হবে। নিহত সালমা আক্তারের বাবা সোলেমান বেপারী যে হত্যা মামলা করেছেন সেই মামলায় প্রতিপক্ষ কাউকে হয়রানি করা হবে না। ওই মামলার বিষয়ে সিনিয়র অফিসার ও আদালতের পরামর্শক্রমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আফজাল হোসেন ও চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান।

Close