জেলার খবর

স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া

নাঙ্গলকোটে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া

মোঃ হুমায়ুন কবির মানিক, কুমিল্লা প্রতিনিধি।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার পুজকরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এর মনোনীত প্রতিনিধি ও কুমিল্লা জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার।
জানা যায়, পুজকরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসী বেগম গত বছরের ২৫ নভেম্বর ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী অবসরে যান। এরপর বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করে শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কার্যক্রম চালায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। প্রধান শিক্ষক পদে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার আবেদন করায় তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলামকে। সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে আলোকে ১৮ জুন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার আহবান করা হয়। তবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্নে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভার রিজুলেশনে পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহাজাহান চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ উঠায় ওইদিন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে আসা ডিজির প্রতিনিধি ও জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার তা স্থগিত করে দেন। নিজের পছন্দের ব্যক্তিদেরকে নিয়োগ দেয়ার জন্যই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহাজাহান চৌধুরী স্বাক্ষর জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগের অপচেষ্টা করেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. শাহাজাহান মেম্বার, বেলাল হোসেন ও আবদুল মান্নান জানান, আমরা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে সকল রিজুলেশনে স্বাক্ষর সমেত অন্যান্য কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও সভাপতি নিজেই সবার স্বাক্ষর জাল করে সভার রিজুলেশন তৈরি করে কুমিল্লা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেন এবং ডিজির প্রতিনিধি এনে নিয়োগ প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার ব্যবস্থা করেন। আমরা ডিজির প্রতিনিধিকে স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি জানানোর পর তিনি তাৎক্ষনিক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে চলে যান।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য কমিটির যে রিজুলেশন জমা করা হয়েছে, এতে আমার স্বাক্ষরসহ কমিটির কয়েকজন সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে জমা দেন সভাপতি। এমনকি সময় স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে স্বাক্ষর জাল করার বিষয়টি তিনি ¯স্বীকারও করেছেন। এমনকি এ ক্ষেত্রে তিনি আমাদের বিদ্যালয়ের রিজুলেশন বই ও নোটিশ বই ব্যবহার না করে বাজার থেকে নতুন রিজুলেশন ও নোটিশ বই ক্রয় করে নিজের কাছে রেখে ব্যবহার করেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, স্বাক্ষর জালের বিষয়টি মিথ্যা। তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যা হয়েছে, তা সকলের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতেই হয়েছে। এসময় তিনি পরিচালনা কমিটির সদস্যরা মিটিং-এ উপস্থিত না থাকার পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সবগুলো পত্রিকা আনতে না পারার কারনে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্থগিত করা হয়েছে।
ডিজির প্রতিনিধি ও কুমিল্লা জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার বলেন, দুইটি প্রত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কথা থাকলেও সভাপতি একটি পত্রিকা দেখান। স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখাতে না পারার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দিন বলেন, স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Close