চান্দিনা

ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করায় বাড়িছাড়া বাদী !

নোয়াখালীতে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করায় বাড়িছাড়া বাদী !

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নে তাছলিমা বেগম (২৬) নামে এক গৃহবধূকে বাড়িছাড়া ও তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় তিনি আদালতে মামলা করেন। আর এই মামলার কারণে আজ সে বাড়িছাড়া।

জানা গেছে, সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের মধ্য কেরামতপুর গ্রামের দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন ওই গৃহবধূ। স্বামী চট্টগ্রামের চাকরি করার সুবাদে তাকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল একই এলাকার কেফায়েত উল্যাহ ও বাহার উদ্দিন। এর সূত্র ধরে গত বছরের ৮ আগস্ট সকাল ১০টায় তার বাড়িতে এসে ঘরে ডুকে কেফায়েত উল্যাহ ও বাহার গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। গৃহবধূর চিৎকারে তার বাবা এগিয়ে এলে কেফায়েত ছুরির হাতল দিয়ে গৃহবধূর মাথায় আঘাত করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। এসময় বাহার ও কেফায়েত তার বাবা সাহাব উদ্দিনকেও মারধর করে পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোন সমাধান না পেয়ে ওই নারী গত বছরের ১০ আগস্ট জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। মামলাটি জুডিসিয়াল তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নবনীতা গুহ তদন্ত করে ১৬ সেপ্টেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এ ঘটনায় একাধিক তদন্ত হওয়ার পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পরে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ কেফায়েত উল্যাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে সে জেলা কারাগারে রয়েছে।

গৃহবধূর অভিযোগ, মামলা করার পর থেকে কেফায়েত ও বাহারের লোকজন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু কেফায়েত গ্রেপ্তারের পর তার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। নিরুপায় হয়ে গত দুই মাস আগে এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে।

ভুক্তভোগীর বাবা সাহাব উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় দোকানপাটে আমাদের কাছে কোন পণ্য বিক্রি করতে নিষেধ করে দিয়েছে তারা। আমাদের বাচ্চাদের মসজিদ, মক্তবে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি আমাকে গত ১২ মার্চ জুমার নামাজ পড়তে গেলে মসজিদ কমিটির লোকজন আমাকে মসজিদে যেতেও নিষেধ করে দেন। ১৯ মার্চ জুমার নামাজে গেলে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির লোকজন আমাকে মারধর করে গলা ধাক্কা দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেয়।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেফায়েতকে গ্রেপ্তারের পর তার পক্ষে মসজিদ কমিটির সভাপতি এমলাক সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক সোলেমান সওদাগরসহ সমাজপতিরা গত দুই সপ্তাহ আগে বৈঠক করে। এসময় সমাজপতিরা আদালত থেকে মামলা তুলে নিতে বলেন। না হলে আমরা থাকতে পারব না বলে সিদ্ধান্ত দেন।

মধ্য কেরামতপুর আহমদিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা মসজিদের ইমাম বলেন, তাদের সকল ধরনের সামাজিক আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণে নিষেধ করা হয়েছে। তবে মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়নি। আমাদের এলাকায় ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। সড়কের পাশে সিমের বীজ বপনকে কেন্দ্র করে তাদের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এই মহিলা মামলা করে এলাকাকে কলঙ্কিত করেছেন। সমাজের লোকজন সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের একঘরে করা হয়েছে।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোলেমান সওদাগর বলেন, ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয়েছে আমরা এটা শুনিনি। আমরা শুনেছি, ধর্ষণের মামলা হয়েছে। সেজন্য সামাজিকভাবে তাদের একঘরে করার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

চরক্লার্ক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাসার বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গৃহবধূর মামলার আইনজীবী সাইফ উদ্দিন কামরুল বলেন, মামলায় বিচার বিভাগীয় দুটি তদন্তে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে আদালত। মামলায় অভিযুক্ত ১ নং আসামি কেফায়েত উল্যাহকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই ভিকটিমের পরিবারের ওপর মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি ও চাপ আসতে থাকে। মামলা তুলে না নেওয়ায় ভিকটিমের স্বামী সাইফুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই আলাউদ্দিনকে আসামি করে মামলার ২নং আসামি বাহার উদ্দিনের স্ত্রী প্রিয়া বেগম (৩৫) একই আদালতে ধর্ষণ মামলা করেন। কিন্তু ধর্ষণের মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তা খারিজ করে দেন।

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনুল হাসান ইভেন জানান, বিষয়টি জানার পরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সমাজচ্যুত করাটা কোন আইনগত প্রক্রিয়া নয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Close