ফিচার

দূষন ও শোষন মুক্ত একটি চান্দিনা চাই মি. প্রাণ গোপাল দত্ত,

শুভ কামনা ও ভালোবাসা রইলো একে সালমান

“দূষন ও শোষন মুক্ত একটি চান্দিনা চাই মি. প্রাণ গোপাল

সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা বাতাসে হাঁটতে বের হলেই রাস্তায় কিছু অচেনা মানুষের সাথে দেখা হয়। শুধু দেখাই হয় না। তাদের শরীর ও মুখ থেকে প্রচন্ড রকমের খারাপ দূর্গন্ধযুক্ত দূষিত বাতাসের গন্ধে হাঁটতে কষ্ট হয়। অনেক কষ্টে বমি থামিয়ে মুখ চেপে ধরে চলে আসতে হয় ঘরে। সকালের বিশুদ্ধ ঠান্ডা হাওয়ায় আর হাঁটা হয় না। হালকা নাস্তা করে বাজারের জন্য বের হয়ে গাড়িতে করে যখন বাজারের দিকে রওয়ানা হয়ে যাই। বাজারে পৌঁছার পর জানতে পারি গাড়ি ভাড়া ১০ টাকার জায়গায় বেড়ে ভাড়া দাঁড়িয়েছে ২০ কিংবা ২৫ টাকায়। তখনই গ্রামের সহজ সরল মানুষের সাথে গাড়ির ড্রাইভারদের সাথে বাজে মহা গন্ডগোল। মাঝে মাঝে এমনও দেখতে হয় আমাদের, গাড়ি ভাড়া নিয়ে গ্রামের সহজ সরল বয়ষ্ক লোকটির সাথে ড্রাইভারের বাকবিতন্ডা সহ শরীরে হাত তোলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। তখন ড্রাইভারদের কাছে শুনতে হয় আমাদের লাইনের টাকাটা কি আপনি দিবেন? এমন অবস্থায় অসহায় হয়ে প্রতিটি গাড়ি ষ্ট্যান্ড থেকে যে কোন জায়গায় যেতে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। বাজার শেষে বাড়ি ফেরার পথে যখন দেখি কোন বাড়িতে পারিবারিক ঝগড়া লেগেছে। সেই ঝগড়ায় এক পক্ষের লোক হয়ে অন্য পক্ষকে মারার জন্য এলাকার কিছু কাজ না করা মূর্খ বেকার ছেলেদের আনাগোনা। হৃদয়বিদারক কিছু অংশ দেখা যায় ঝগড়া লাগার ঠিক কিছুক্ষন পর। দূর্বল সদস্যকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেয় লোক ভাড়া করে আনা সবল সদস্যটি।

মার খাওয়ার পর দূর্বল লোকটির পড়তে হয় আরো বিপাকে। যখন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কিংবা চেয়ারম্যানের কানে চলে যায় বিষয়টি। নতুন খেলা শুরু হয় তখন। চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে চলে যায় ঝগড়া লাগা সবল ব্যাক্তিটি। কিছু হাদিয়া তোহফা দিয়ে এসে বলে এবার তাকে সাইজ করে দেন। ঢেকে নিয়ে আসা হয় দূর্বল ব্যাক্তিটিকে। প্রথমে শুরু ইউনিয়ন পরিষদে থাকা সম্মানীত চেয়ারম্যান সাহেবদের কিছু লালিত বাহিনী দিয়ে নির্যাতন। এরপর দরবারে বসে সুরাহা হয় কোন বিনিময়ে। তখন হয়তো আমাদের ঐ বিনিময় অজানাই থেকে যায়।

এভাবে বিচার শেষে বিকেল ঘনিয়ে আসে। সব কিছু দেখে বাড়িতে এসে গোসল করে যখন বিকেল বেলা রওয়ানা হই একটু ফুটবল খেলতে যাবো। ঠিক তখনই পাশের বাড়িতে কান্নার শব্দে দৌঁড়ে গিয়ে দেখি বাচ্চাটা অসুস্থ। তার জন্য বাড়ির মালিকের কান্না। এমন পরিস্থিতিতে চিন্তায় পড়ে যেতে হয়। তখন কোন উপায় না পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারকে ফোন দেই। বাড়িতে এসে একটু রুগী দেখে যেতে। তখনই ডাক্তার সাহেব ফোনের ওপাশ থেকে বলে, আমি তো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নাই। হতাশ হয়ে কোন রকম একটা ডায়গনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতে হয়। সেখানে গিয়ে রুগীর কি রোগ তা নির্ণয় না করেই এলাকার গ্রামীন ডাক্তার ইচ্ছেমতো ইনজেকশন আর মেডিসিন দেয়। রুগীর এমন অসহ্য যন্ত্রনা দেখে চিন্তায় মাথায় ভাঁজ পরে।

সেখন থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় রুগীকে ইউনিয়ন পরিষদের হাসপাতালে নিয়ে যাবো। যখন ইউনিয়ন পরিষদের কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে পড়তে হয় নতুন বিপদে। হাসপাতালে কোন ঔষুধ নেই। নেই কোন মেশিনপত্রও। কিন্তু আমরা দেখি সরকার ভালো ভালো দামি মেশিনারীজ হাসপাতালে বরাদ্ধ দেয়। এক রকম ক্লান্ত হয়েই বলি যা ঔষুধ লিখছেন দেন। দোকান থেকে নিয়ে আসি। রুগী বাঁচানো দিয়ে কথা। তখন হাসপাতালের সবচেয়ে কাছে যে মেডিসিন দোকানটি সেখানে গিয়ে ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশনটি দিলে তিনি ঔষুধ দেন।

আয়হায়, একি মহা কান্ড! যে মেডিসিনগুলো আমি ইউনিয়ন পরিষদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফ্রি পাওয়ার কথা। সেই মেডিসিন এ দোকান থেকে কিনে নিতে হচ্ছে! মনে তখন প্রশ্ন জাগে, জনগনের সেবায় সরকার দেওয়া ঔষুধগুলো দোকানে এলো কি করে? রাগে ক্ষোভে কোন রকম নিজেকে সামলিয়ে তখন ঔষুধগুলো দিয়ে বাড়িতে রওয়ানা হই। তখন প্রায় অনেক রাত হয়ে যায়। চারদিকে অন্ধকার। রাস্তায় কোন গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই বাড়িতে রওয়ানা দেই। কিছুক্ষন পর দেখি কয়েকটি সিএনজি’র শব্দ। হাত দিতেই সিএনজিগুলো না থেমে চলে যায়। গভীর রাতে এমন সিএনজি’র কথা অনেকের মুখে শুনেছি। প্রতিটি এলাকায় নাকি রাত হলেই এমন সিএনজি করে সমাজের প্রতিটি যুবককে ধ্বংস করতে মাদকের মতো ভয়ংকর জিনিস বিভিন্ন ঘরে ঘরে বন্টন করে দিয়ে যায়। বাড়িতে হেঁটে হেঁটে যাওয়ার সময় রাস্তায় অনেক সুন্দর ঘ্রাণ নাকে ভেসে আসে।

তখন মনের মধ্যে খুব আনন্দ জাগে। চিন্তা করি এমন সুগন্ধীযুক্ত কি ফুল? একটুতো দেখতেই হবে। কাছে যেতেই মনে হলো কোন ঘর থেকে এমন সুগন্ধিটা আসছে। তখন মনের মধ্যে আরো আগ্রহ জাগলো। ঘরের ভেতর কি এমন ফুল গাছ? যার থেকে এমন সু-ঘ্রান আসছে। একটু উঁকি দিতেই গাঁ চমকে উঠলো যথারীতি।

এতো ফুলের ঘ্রান নয়। এলাকার পরিচিত নামীদামী রাজনীতিবিদের সাথে বেশ কয়েকজন অপরিচিত লোক। মুখের মধ্যে কেমন যেন একটা চিকন পাইপ ধরে নিচে গ্যাসলাইট জ্বালিয়ে এপাশ থেকে ওপাশ নিচ্ছে। পাইপের ওপর মনে হলো ছোট একটা ট্যাবলেট রাখা। কি এক ভয়ানক দৃশ্য।

এগুলো দেখে মনে আর শান্তি জাগলোনা। বাড়িতে যেতে অনেক জায়গায় এমন অপরিচিত ফুলের ঘ্রাণ নাকে এসে পৌঁছেছে। কোথায়ও আর সেই সুগন্ধিযুক্ত ফুল দেখায় আর ইচ্ছে জাগেনি। বরং মনে ক্ষোভই জেগেছে বার বার।

এভাবেই মনের মধ্যে কষ্ট নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গ্রামের এক বড় ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি অবশ্যই বিদেশে পড়াশুনা করতে গিয়ে সেই চলে গেলেন আর দেশেই আসলেন না। ওনাকে ঘটে যাওয়া বিষয়টি শেয়ার করতেই উনি বললেন, আরে পাগলা এলাকা ছেড়ে দূরে চলে যা ভালো থাকবি। কারো বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই হামলা মামলা সহ নানা রকম সমস্যায় পড়বি। তুই যা দেখছস তার চেয়েও ভয়ংকর কিছু হয়। তার এমন কথা শুনে বুঝার বাকি নেই আমরা কতটা অসহায় হয়ে পড়েছি।

মি. প্রাণ গোপাল, আপনার কাছে অনুরোধ গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোকে নিয়ে। এমন পরিস্থিতি থেকে কি আমাদের সমাজকে বিশুদ্ধ ও শোষন মুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করে দিতে পারবেন? আমরা অপেক্ষা করলাম আপনার সম্ভাবনাময় নতুন কিছুর আশায়।

শুভ কামনা ও ভালোবাসা রইলো
একে সালমান

Exit mobile version