অপরাধ

র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ! অপহরণকারী চক্রের ৫ সদস্য’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ৪; অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার

র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ! অপহরণকারী চক্রের ৫ সদস্য’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ৪; অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার

গত ১১জুন অভিযোগকারী মোঃ বিল্লাল হোসেন (৫০) রাত ২টায় র‌্যাব-৪ এর বরাবর হাজির হয়ে লিখিতভাবে একটি অভিযোগ দায়ের করেন যে, দ্বাদশ শ্রেনীতে অধ্যয়নরত তার ছেলে মোঃ রানা আহমেদ (১৯) কে র‌্যাব পরিচয়ে কিছু লোক একটি সাদা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে অপহরণকারীরা ভিকটিমের পিতার নিকট ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

উক্ত অভিযোগের ভিক্তিতে র‌্যাবের একটি চৌকস আভিযানিক দল ১২ জুন সকালে রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সাগুপ্তা হাউজিং লিঃ নিঝুম সমিতির প্লট এর কাশবনে এবং মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহৃত ভুক্তভোগীসহ ১টি পিস্তল, ১টি গুলি, ৯৮ পিস ইয়াবা, র‍্যাব জ্যাকেট, সেনা আইডি কার্ড, ভুয়া র‍্যাব আইডি কার্ড, র‍্যাব লোগো সম্বলিত স্টিকার, র‍্যাব মনোগ্রামযুক্ত মাক্সসহ নিম্নবর্ণিত ০৫ জন আসামীদের’কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়ঃ

(ক) মোঃ আশিকুর রহমান (২৯), জেলা- রাজশাহী।
(খ) শাহ মোঃ দোজাহান (২২), জেলা- চাঁদপুর।
(গ) মোঃ মিঠুন (১৮), জেলা- ঢাকা।
(ঘ) মোঃ হাবিবুর রহমান (২৭), জেলা- মানিকগঞ্জ।
(ঙ) মোঃ শরিফুল ইসলাম (৩২), জেলা- মানিকগঞ্জ।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে জানা যায় যে, গত ১১জুন সন্ধ্যা ৭টায় ভিকটিম মোঃ রানা আহমেদ (১৯) মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন সাফুল্লী স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা শেষে বাড়ী ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন ইনাম ক্লাব এর সামনে পৌঁছামাত্র র‌্যাবের জ্যাকেট ও র‌্যাবের লোগো সম্বলিত মাস্ক পরিহিত অবস্থায় কতিপয় ব্যক্তি র‌্যাব পরিচয় দিয়ে ভিকটিম মোঃ রানা আহমেদ (১৯) কে পথরোধ করে মাথায় পিস্তল ঠেকায় এবং পকেটে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে তাকে মাদক পাচারকারি হিসেবে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাত সারে ১০টায় অপহরনকারী দলের এক সদস্য ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তার পিতার কাছ থেকে ১৫,০০,০০০/- পনের লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে তা না হলে ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিক্রয় করে দেয়া হবে বে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিমের বাবা মুক্তিপনের ১৫ লক্ষ টাকা কমানোর জন্য বার বার অনুরোধ করলে শেষ পর্যন্ত ৫ লক্ষ টাকায় রাজি হয়। মুক্তিপণের দাবিকৃত ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে অপহরনকারীরা ভুক্তভোগীর বাবাকে মিরপুর-১ গোল চত্তর এলাকায় আসতে বলে। সে সময় আভিযানিক দলের পরিকল্পনায় ও তত্ত্বাবধানে ভিকটিমের বাবা মুক্তিপণের টাকাসহ মিরপুর-১ পৌছালে অপহরনকারীরা স্থান পরিবর্তন করে মিরপুর ডিওএইচএস এর ১ নং গেইটে আসতে বলে। সেখানে অপহরকারীর এক সদস্য উপস্থিত হলে র‌্যাবের আভিযানিক দল কর্তৃক গ্রেফতার করা হয় এবং উক্ত অপহরনকারীকে জিজ্ঞাসাবাদে পল্লবী থানাধীন মিরপুর সাগুপ্তা হাউজিং লিঃ সমিতির প্লট হতে ভুক্তভোগী উদ্ধারপৃর্বক অপহরনকারীর আরো ০২ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে চলমান অভিযানে উক্ত অপহরনকারী দলের মূল সহযোগী মোঃ হাবিবুর রহমান (৩৭) এবং অপর সহযোগী মোঃ শরিফুল ইসলাম (৩২)দ্বয়কে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ধৃত আসামীরা একে অপরের পূর্ব পরিচিত। ভিকটিমের বাবা এলাকার চাল ব্যবসায়ী। ভিকটিমের পরিবার তুলনামূলকভাবে অর্থশালী হওয়ায় প্রতিবেশী মোঃ শরিফুল ইসলাম এবং হাবিবুর রহমানের পরিকল্পনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাকি অপহরণকারীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা যায। অপহরণকারীরা অপহরণের পর ভিকটিমের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালায়, অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার এবং অপহরনকারী গ্রেফতারের অভিযান চলাকালীন র‌্যাবের আভিযানিক দলের ৫ সদস্য আহত হয়। অপহরনকারীর মূল সদস্য মোঃ আশিকুর রহমান বাড়ী রাজশাহী জেলা।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং এই ধরনের অপহরণকারীর বিরুদ্ধে র‌্যাবের জোড়ালো অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Close