ফিচার

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের জন্মদিন আজ

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের জন্মদিন আজ

 

দেশের বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের জন্মদিন আজ রবিবার (৯ আগস্ট)। এ দিনটিতে ৭৯ পেরিয়ে ৮০ বছরে পা রাখলেন। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন জন্মদিন বিশেষ কিছু নয়। জন্মদিন উদযাপনে তিনি বিব্রত হন।

জন্মদিন প্রসঙ্গে রামেন্দু মজুমদার বলেছিলেন, “জন্মদিন একান্তই ব্যক্তিগত। এতে নিজের বিশেষ কোন কৃতিত্ব নাই। মানুষ তার কর্মের মাঝেই বেঁচে থাকে, বিশেষ হয়ে উঠে। জীবনের কর্মযাত্রাকে উদযাপন করতে চাই। আমার কাছে এ দিনটি অন্য সব দিনের মতোই। তবে সবার ভালোবাসায় দিনটি বিশেষ হয়ে উঠে। নিজের জন্মদিনকে ঘিরে মানুষের উপচেপড়া ভিড় আর নিজে একজন কয়েদির মতো করে বসে থাকাটা আমার কাছে বিব্রত লাগে। এমনিতে মানুষ ফোনে কিংবা সরাসরি শুভেচ্ছা জানায়। এটা উপভোগ করি। কিন্তু জন্মদিনকে ঘিরে অনুষ্ঠান আয়োজনে কিছুটা বিব্রত হই। উৎসব আমার ভালো লাগে, অন্যের জন্মদিনে যেতেও আপত্তি নেই। কিন্তু নিজের জন্মদিন পালনের মতো পাবলিক ফাংশন আমার ভালো লাগে না। আমি বসে থাকবো, সবাই আমার প্রশংসা করবে এটা শুনতে ভালো লাগে না।”

১৯৪১ সালের ৯ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে জন্মগ্রহণ করেন রামেন্দু মজুমদার। ছাত্রাবস্থায়ই থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনকে বেগবান করার পথে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। নাট্যসংগঠন ‘থিয়েটার’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন শুরু থেকেই। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নাট্যবিষয়ক পত্রিকা ‘থিয়েটার’ সম্পাদনা করছেন। ইউনেস্কোর অধীনে আন্তর্জাতিক নাট্য সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট’-এর সভাপতি হিসেবে পরপর দু’বার দায়িত্বপালন করেছেন। বর্তমানে এর সম্মানিক সভাপতির পদে রয়েছেন। সংসার জীবনে কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার তার স্ত্রী। তাদের একমাত্র সন্তান অভিনয়শিল্পী ও নির্দেশক ত্রপা মজুমদার।

রামেন্দু মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) ও এম এ পাস করে অধ্যাপনাকে বেছে নেন পেশা হিসেবে। নোয়াখালীর চৌমুহনী কলেজে বছর তিনেক অধ্যাপনার পর পেশা পরিবর্তন করে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে বিজ্ঞাপনশিল্পে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং বঙ্গন্ধুর বক্তৃতা, বিবৃতির একটি ইংরেজি সংকলন সম্পাদনা করে দিল্লি থেকে প্রকাশ করেন। ১৯৭২-এ দেশে ফিরে বিটপি এ্যাডভার্টাইজিং এ পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯৩ এ প্রতিষ্ঠা করেন এক্সপ্রেশানস্‌।

বেতার ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করছেন যথাক্রমে ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সাল থেকে। এ দু’টো মাধ্যমে দীর্ঘদিন সংবাদ পাঠ করেছেন। মঞ্চে অভিনয় করছেন ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। বাংলাদেশের নব নাট্যচর্চায় রামেন্দু মজুমদার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। ‘থিয়েটার’ নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ‘থিয়েটার’ পত্রিকার সম্পাদক, ‘আবদুল্লাহ আল-মামুন থিয়েটার স্কুল’-এর সম্পাদক, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি হিসেবে তার সংযুক্তি বাংলাদেশের নাটক ও সংস্কৃতি চর্চাকে বেগবান করেছে।

বাংলাদেশের নাটককে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে রামেন্দু মজুমদার পালন করছেন অগ্রণী ভূমিকা। তিনি ১৯৮২ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট’ (আইটিআই) এর বাংলাদেশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ আইটিআই কেন্দ্রকে একটা মর্যাদার আসনে পৌঁছাতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন।

তাঁর মৌলিক ও সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৬। তিনি বিভিন্ন সম্মাননা ও পদক পাওয়া ছাড়াও ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদক’ পেয়েছেন। বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করেছে।

 

Close