অপরাধ

যুবলীগ নেতার ফের বালু লুট, যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যাবে দুটি গ্রাম

যুবলীগ নেতার ফের বালু লুট, যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যাবে দুটি গ্রাম

✍চান্দিনার সময় বিশেষ  রিপোর্ট::

কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া কোনার পাড়া এলাকায় আইন লঙ্ঘন করে বাঁকখালী নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ ও তীর সংরক্ষণ বাঁধের খুব কাছ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও যুবলীগ কর্মী জাহাঙ্গীর আলম বালু তুলছেন। এভাবে বালু তোলায় বাঁধ ও পাড়ের কৃষিজমিসহ দুটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ৪-এর খ-ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু তোলা যাবে না।

কিন্তু ওই আইন লঙ্ঘন করে রামু-সদরের বাঁকখালী নদীর পশ্চিম উমখালী থেকে পূর্ব উমখালী পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশে অবৈধভাবে বালু তুললেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

স্থানীয় সন্ত্রাসীদের উপস্থিতিতে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর বালু তুলছেন বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন। এভাবে বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে ভাঙন ও বন্যাকবলিত মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল পশ্চিম উমখালী এলাকার বন্যানিয়ন্ত্রণ ও মিঠাছড়ি তীর সংরক্ষণ বাঁধ।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, রামুর মিঠাছড়ি ও সদরের বাঁকখালী নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধসংলগ্ন পশ্চিম উমখালী, পূর্ব উমখালী এবং কোনার পাড়া থেকে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম শ্রমিক নিয়োগ করে বালু তুলছেন। বালু তোলার পর ডাম্পার (মিনিট্রাক) যোগে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিটি স্থানেই বাঁধের ১০০-১৫০ মিটারের মধ্য থেকে বালু তোলা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, বাঁকখালী নদীর দক্ষিণাংশে জনগুরুত্বপূর্ণ মিঠাছড়ি-রাজারকুল সড়ক আর উত্তরাংশে খরুলিয়ার কোনার পাড়া ও ঘাটপাড়া। নদীর সাথে উভয়পাড়ের দূরত্ব প্রায় ২০-৪০ গজ। এ অংশেই নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে তীরবর্তী ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর বিলীন হবার আশঙ্কায় রয়েছে দুই গ্রামের মানুষ।এ নিয়ে চাপা আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাদের মতে, একাধিকবার বুঝিয়েও বালু খেকোদের রোধ করা যায়নি। উল্টো নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন প্রভাবশালী বালু খেকো জাহাঙ্গীর।

তাদের মতে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রশাসনের অবহেলায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বালু দস্যু জাহাঙ্গীর। বালু তোলার ফলে নদীর ভাঙনরোধে বসানো কোটি টাকার আরসিসি ব্লকও সরে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বালু খেকো জাহাঙ্গীর নদী থেকে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি নদীর তীরের ফসলি জমিতে জমা পলি মাটিও প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন মাটি ও বালু ভর্তি অসংখ্য ট্রাক চলাচলের কারণে নদীর তীরের কাঁচা সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ।সব মিলিয়ে এলাকার ফসলি জমি, নদীর পাড়ের ব্লক ও বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। বাড়ছে নদীর তীর ভাঙনও।

কোনার পাড়া গ্রামের আবদুল করিম ও রহমত উল্লাহ (ছদ্মনাম) বলেন, গত বছরও কোনারপাড়ার ‘জাহাঙ্গীর সিন্ডিকেট’ ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের হয়ে কয়েক কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করে। এরপর পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভাঙনের কবলে পড়ে নদী গর্ভে তলিয়ে যায় আমাদের পাঁচ একর ফসলি জমি। বালু তুলে কোটি টাকা পাওয়া যায় দেখে লোভের বশবর্তী হয়ে এবার নিজস্ব ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছে তারা। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে নদীর ভাঙনে আরসিসি ব্লক, নদীর তীরবর্তী উমখালী, পশ্চিম উমখালী, মিঠাছড়ি, ঘাটপাড়া গ্রামের শত শত একর আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় চাষিরা জানান, শুকনো মৌসুমে নদীর চরে শত শত একর জমিতে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ হতো। বর্গা কিংবা লিজে জমি নিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতো শত শত চাষি। কিন্তু তীরের জমির পলি তুলে নিয়ে খানাখন্দ করায় আগের মতো চাষাবাদ করা যায় না। আবার পলির উপর বালু জমিয়ে রাখায় অনেক জমি চাষের আওতামুক্ত থাকছে। এসব বিষয় বলতে গিয়ে বালু খেকোদের দ্বারা হত্যার হুমকির শিকার হতে হয়েছে অনেকে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার সুইটি বলেন, এভাবে বালু তোলা সম্পূর্ণ অবৈধ। অভিযোগ পেয়েছি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Close