অপরাধ

ক্লান্ত হলেই শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া হতো গরম তেল!!

ক্লান্ত হলেই শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া হতো গরম তেল!! 

চৌদ্দ বছরের কিশোরী আছমা খাতুন। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের মেয়ে। গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার। 

তার বাড়ির পাশেই ফারসিং নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার অবস্থান। ওই কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের ঢাকার উত্তরায় ৩ নম্বর সেক্টরের ৭/বি রোডের ৩১ নম্বর বাসায় বসবাস করেন। মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাসার কাজের জন্য বছরখানেক আগে আছমাকে উত্তরার বাসায় নিয়ে যান। 

আছমার অভিযোগ, ঘরের কাজ করে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিতে চাইলে শুরু হতো নির্যাতন। শরীরে গরম তেল ঢেলে দেওয়া, লাঠিপেটা করা এবং বিভিন্ন সময় সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেওয়া হতো। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম তৈরি হয়। এ অবস্থায় তাকে চিকিৎসা করানো হয়নি। করোনার অজুহাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেওয়া হতো না। 

আছমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৯ জুন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে তার বাড়ির উদ্দেশে গাড়িচালকের মাধ্যমে একটি যাত্রীবাহী বাসে তুলে দেওয়া হয়। পরে কিশোরী বাড়িতে ফিরে এসব ঘটনা তার বাবা-মাকে জানায়। 

আছমার অভিযোগ, বাসার মালিক আবু তাহের মাঝে মধ্যেই কিল-ঘুষি দিয়ে নির্যাতন করতেন। কয়েকবার সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকাও দিয়েছেন। তার স্ত্রী শাহজাদীও শরীরে দিতেন গরম তেলের ছিটা। তারপর দগ্ধ ঘায়ের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিতেন। গত চার মাস ধরে এমন নির্যাতন চালানো হয়েছে। 

»»  আপডেট, ৩ জুলাই— গৃহকর্মী আছমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ইতোমধ্যে একজন কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান। একজন কর্মকর্তা আমাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

»»  আপডেট, ৪ জুলাই— আবু তাহের এবং তার স্ত্রী শাহজাদীর বিরুদ্ধে উত্তরা থানায় মামলা দায়ের হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে মামলার পর কিশোরীর পরিবারকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দেড় লাখ টাকায় আপোষনামা করে নেওয়ার জন্য একটি স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এর ফলে মামলাটি হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে! 

 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাদের একটি ইউনিট মেয়েটির পক্ষে কাজ করছে। তারা শেষপর্যন্ত অসহায় পরিবারটির সহায়ক হলে নিশ্চয়ই নির্যাতক বিচারের মুখোমুখি হবে। 

 

এমন বর্বরতা কোনভাবেই বরদাশত করা যায় না। চৌদ্দ বছরের কিশোরী আছমা যেন তার ওপর ঘটে যাওয়া বর্বরতার বিচার পায়। সবাই মেয়েটির হয়ে সোচ্চার হলে নিশ্চয়ই কোনো শিল্পপতির রক্ষা নেই।

Close